পরিষেবা শিকেয়, বিএসএনএল ছাড়তে চান গ্রাহকেরা

ফ্ল্যাট কিনে লর্ডস থেকে কসবায় এসেছেন এক মহিলা। স্থানীয় বিএসএনএল-এর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে তিনি তাঁর ল্যান্ডলাইনটির জায়গা পরিবর্তন করে নিয়ে আসেন কসবায়। সঙ্গে চেয়ে নেন অতিরিক্ত ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৮:২১
Share:

ফ্ল্যাট কিনে লর্ডস থেকে কসবায় এসেছেন এক মহিলা। স্থানীয় বিএসএনএল-এর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে গিয়ে তিনি তাঁর ল্যান্ডলাইনটির জায়গা পরিবর্তন করে নিয়ে আসেন কসবায়। সঙ্গে চেয়ে নেন অতিরিক্ত ব্রডব্যান্ড পরিষেবাও। আবেদন করার মাসখানের মধ্যেই তার টেলিফোনটি ব্রন্ডব্যান্ড-সহ নতুন বাড়িতে বসিয়ে দেয় বিএসএনএল।

Advertisement

কিন্তু মাত্র দু’দিন!

তার পরেই খারাপ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড পরিষেবা। মেরামতির জন্য ইতিমধ্যে মোট সাত বার বিভিন্ন জায়াগায় অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রায় আড়াই বছর কেটে গিয়েছে। লাইন চালু হয়নি। উল্টে তাঁর বাড়িতে ব্রডব্যান্ড বসানোর জন্য তিন হাজার টাকার একটি বিল পাঠিয়ে দিয়েছে বিএসএনএল। বলতে গেলে একচেঞ্জ থেকে বলা হয়েছে, ‘আগে বিল জমা দিন। পরে কথা হবে।’ সুরাহা না হওয়ায় তিনি ওই বিল না মিটিয়ে টেলিফোনের একটি বেসরকারি পরিষেবা সংস্থার কাছ থেকে নতুন কানেকশন নিয়ে এখন কাজ চালাচ্ছেন।

Advertisement

ওই মহিলার মতো কসবারই বাসিন্দা আর এক ব্যক্তিও বিরক্ত হয়ে অনেক আগেই তাঁর বিএসএনএল মোবাইল নম্বরটি অন্য একটি পরিষেবা সংস্থায় নথিভুক্ত করেছেন। দীর্ঘ দিনের পুরনো বলে ল্যান্ডলাইনটি রেখে দিয়েছিলেন। কিন্তু কার্যত ভেঙে পড়া পরিষেবায় অতিষ্ঠ হয়ে বাধ্য হয়ে শেষ পর্যন্ত বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইনটিও তিনি সম্প্রতি ছেড়ে দিলেন। তিনি জানান, ওই ফোন ছাড়তে গিয়েও যথেষ্ট হ্যাপা পোহাতে হয়েছে তাঁকে। যা ভোগান্তিও বটে।

শুধু ওই দু’জনই নন, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার বিএসএনএলের এ হেন কর্মসংস্কৃতিতে গ্রাহকেরা কমবেশি সবাই তিতিবিরক্ত। যত দিন যাচ্ছে, ততই নামছে পরিষেবার মান। বিএসএনএল কর্তারা মুখে যা-ই বলুন না কেন, অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে পড়েছে যে পারলে সব গ্রাহকই এখনই ওই পরিষেবা ছাড়তে চান। শেষ চার বছরে বিএসএনএলের গ্রাহক সংখ্যা কী ভাবে কমছে সেটা দেখলেই পরিষেবার মান কতটা উন্নত হচ্ছে সেটা পরিষ্কার হবে।

বিএসএনএল সূত্রের খবর, ২০১১ সালে বিএসএনএলের ল্যান্ডলাইন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষেরও বেশি। ক্রমশ কমতে কমতে সেই সংখ্যা এখন দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৭ লক্ষের কাছাকাছি। ওই সময় মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৬ লক্ষ। সেটা কমে হয়েছে ৭ লক্ষের একটু বেশি। অর্থাৎ অর্ধেকেরও অনেক নীচে। এমনকি এ বছর লাভ হওয়া দূর অস্ত, আয় কমেছে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা।

কেন কমছে গ্রাহক সংখ্যা?

বিএসএনএলের কর্তারা বলছেন, ল্যান্ডলাইনের ক্ষেত্রে মূল অসুবিধাই হল, গ্রাহকদের চাহিদার পরিবর্তন। গ্রাহকেরা আর এখন এক জায়গায় ফোন থাকুক চান না। তাঁদের বক্তব্য, সমীক্ষায় উঠে এসেছে, যে ভাবে মানুষের কাজের ধরন পাল্টাচ্ছে তাতে দেখা গিয়েছে, গ্রাহকেরা ল্যান্ডলাইনের দিক থেকে মুখ সরিয়ে মোবাইলে কাজ সারছেন।

কিন্তু ব্রডব্যান্ড? বিএসএনএল কর্তাদের বক্তব্য, বেশির ভাগ মানুষই এখন মোবাইলেই নেট দেখতে চান। ফলে ব্রডব্যান্ডের গ্রাহক কমছে। কিন্তু বিএসএনএল কর্তারা যা-ই বলুন না কেন, বিএসএনএলের গ্রাহক সংখ্যা কমার পিছনে গ্রাহকদের মানসিকতার পাশাপাশি আর একটি কারণও রয়েছে। সেটি হল বিএসএনএলের কর্মসংস্কৃতি। গ্রাহকদের অভিযোগ, কোনও যন্ত্র এক বার খারাপ হলে সেটা মেরামতির জন্য মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু বেসরকারি সংস্থায় কোনও অভিযোগ হলে সেটা প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মেরামত করে দেন তাঁরা।

কর্মসংস্কৃতির হাল যে ক্রমশই কমে যাচ্ছে, সেটা বিএসএনএলের কর্তারও স্বীকার করে নিয়েছেন। বিএসএনএল সূত্রেরই খবর, সম্প্রতি এ রাজ্যের কর্মসংস্কৃতির প্রসঙ্গ তুলে বিএসএনএলের সর্বোচ্চ কর্তা বিহারে বদলি নিয়ে চলে গিয়েছেন। যাওয়ার আগে তিনি ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি চেষ্টা করেও এখানে কর্মসংস্কৃতি ফেরাতে পারেননি। তাই বাধ্য হলেন চলে যেতে। ফলে কর্তারাই যখন চলে যাচ্ছেন তখন গ্রাহকেরা থাকবেন কী ভাবে?

তবে মোবাইল পরিষেবার ক্ষেত্রে মূল অসুবিধাগুলি একটু আলাদা। এ ক্ষেত্রে সময়মতো প্রযুক্তিগত ও পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে না পারার সমস্যাই এখন বিএসএনএল মোবাইলের গ্রাহক বাড়ানোর ক্ষেত্রে মূল অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিএসএনএল কর্তারা বলছেন, মোবাইল টাওয়ার খারাপ হওয়া, দূষণের কারণে অনেক টাওয়ার বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে বিএসএনএলের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সচেতন না করাতেই পিছিয়ে পড়ছেন তাঁরা।

প্রশ্ন উঠেছে, যার উপর ভিত্তি করে সব সংস্থা যে পরিষেবা দেয়, সেই টু-জি, থ্রি-জি বা ফোর-জি ‘স্পেকট্রাম’ এক থাকা সত্ত্বেও বিএসএনএল পারছে না কেন?

বিএসএনএলের কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘‘সরকারি ফাইলের লাল ফিতের ফাঁসে কাজের দেরি আর কর্মীদের মানসিকতা। দুটোই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement