জমি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।—নিজস্ব চিত্র।
এখনও জমিতে রয়ে গিয়েছে নাবিধসার ছত্রাক, আবহাওয়া প্রতিকূল হলেই ছড়িয়ে পড়তে পারে সংক্রমণ বুধবার কালনার সুলতানপুর এলাকার আলু চাষের জমি ঘুরে দেখে চাষিদের এভাবেই সতর্ক করলেন রাজ্যের কৃষি বিশেষজ্ঞ দলের সদস্যেরা। নাবিধসা ঠেকাতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি নাবিধসার সংক্রমণ নিয়ে ব্লক থেকে জেলা কৃষি দফতরে একটি রিপোর্ট পাঠানো হয়। তারপরেই বুধবার দুপুর নাগাদ রাজ্য পর্যায়ের ওই দলটি সুলতানপুরে আসে। তিন সদস্যের ওই দলে ছিলেন উপ-কৃষি অধিকর্তা (বায়োকন্ট্রোল ল্যাবরেটরি) দক্ষিণারঞ্জন বৈদ্য, মাইক্রোলজিস্ট উত্তম রায়চৌধুরী ও কীটতত্ত্ববিদ বিজয় চৌধুরী। পরে কালনা থেকে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হন জেলা সদরের সহ-কৃষি অধিকর্তা (শস্য সুরক্ষা) সুপ্রিয় ঘটক, কালনা মহকুমার সহ-কৃষি অধিকর্তা পার্থ ঘোষ এবং ব্লক কৃষি আধিকারিক আশিস দত্ত। ৬ সদস্যের দলটি এরপরে সুলতানপুরের বটতলা গ্রামের আলু চাষিদের জমি পরিদর্শনে যান। দীপু পান নামে এক চাষির জমিতে নেমে তাঁরা পরীক্ষা শুরু করেন। বেশ কিছু নমুনাও জোগাড় করেন। পর্যবেক্ষণের মাঝেই সুপ্রিয়বাবু বলেন, “কালনা, মেমারি, জামালপুরের কিছু জমিতেও ক্ষতিকারক ছত্রাক আটকে রয়েছে।” নাবিধসার পাশাপাশি কিছু জমিতে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণের ফলে কান্ড পচে যাওয়াও লক্ষ্য করেন বিশেষজ্ঞরা। তাছাড়া চাষিদের ভাষায় তিলে ধসা নামে এক ধরনের রোগের উপসর্গও দেখতে পান। এই রোগে আলু গাছের পাতার উপরের অংশে জিরিজিরি দাগ দেখা যায়। ফলে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত হয়। চাষিদের সঙ্গেও কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা। জমিতে কী বীজ ব্যবহার করা হয়েছে, বীজ শোধন করা হয়েছিল কি না, গাছের বয়স কত, কি ওষুধ কতখানি ব্যবহার করা হয়েছে সে সমস্তও জানতে চাওয়া হয়। বটতলার এক চাষি শেখ আমির আলী বলেন, “আমার ১৪ বিঘা জমিতেই এই রোগ দেখছি।” তাঁর দাবি, “গত বছর পঞ্জাবের বীজে আলু চাষ করেছিলাম। এ বছরও তাই করেছি। কী করে এমন হল জানিনা।” বিশেষজ্ঞরা খুঁটিনাটি জিজ্ঞেস করে তাঁকে জানান, ঠিকমতো বীজ শোধন না করাতেই ওই রোগ ছড়িয়েছে। অন্য চাষিদেরও রোগ ছড়ানোর কারণ ধরিয়ে দেন তাঁরা। দেখা যায়, গাছ আক্রান্ত হওয়ার পরে কেউ কম প্রতিষেধক প্রয়োগ করেছেন, কেউ বা ভুল ওষুধ দিয়েছেন। ফলে ওই ক্ষতিকারক ছত্রাক ও ব্যকটেরিয়া আটকানো যায়নি। বিশেষজ্ঞরা সঠিক ওষুধ ও তার মাত্রা জানিয়ে দেন চাষিদের।
পরিদর্শন শেষে দক্ষিণারঞ্জনবাবু জানান, ডিসেম্বরে এক সময় মেঘলা, ঝিরঝিরে বৃষ্টি এবং ঘন কুয়াশা দেখা দিয়েছিল। তাতেই উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে নাবিধসা ছড়িয়ে পড়ে। পরে আবহাওয়া বদলালেও ছত্রাক জমিতেই বন্দি থেকে যায়। তাঁর দাবি, রাজ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে নাবিধসা দেখে গেলেও মারাত্মক কিছু হয়নি। এখন আলু চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। তবে আবহাওয়া প্রতিকূল হলে আবারও ওই রোগ ছড়াতে পারে বলে তাঁর আশঙ্কা। সেক্ষেত্রে ফলন কমে যাওয়ারও আশঙ্কা করেছেন তিনি। উত্তমবাবু বলেন, “মেঘলা, ঘন কুয়াশা হলেই চাষিদের বাড়তি সতর্ক থাকতে হবে।” এছাড়া লিফলেট বিলি চাষিদের সমস্ত পরামর্শ দেওয়া হয়েছে জানান ওই দলের সদস্যেরা। প্রয়োজনে ব্লক কৃষি দফতরে যোগাযোগ করতেও বলা হয়।