থানায় ডাঁই উদ্ধার হওয়া জিনিসপত্র। —নিজস্ব চিত্র।
মাটি উৎসবের মাঠ থেকে চুরি যাওয়া বেশ কিছু স্টলের নির্মাণ সামগ্রী উদ্ধার করল পুলিশ। বিরুডিহা গ্রামের একটি বাড়ি থেকে সেগুলি উদ্ধার করা হয় রবিবার রাতে। গ্রেফতার করা হয়েছে এক জনকে। তাকে জেরা করে বাকি জড়িতদের ধরার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পানাগড়ের বিরুডিহার লালবাবা আশ্রম মাঠে প্রথম বার মাটি উৎসব আয়োজিত হয় ২০১৩ সালে। এ বছর ফেব্রুয়ারিতেও সেখানেই মাটি উৎসব আয়োজিত হয়েছে। উৎসবের জন্য ইট, কাঠ, টালি, দরমা দিয়ে পূর্ত দফতরের তৈরি করা স্টলে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি দফতর নিজ-নিজ পসরা সাজিয়ে বসে। এ বারও সে ভাবেই মাঠ জুড়ে ৮৩টি স্টল বানানো হয়েছিল। উৎসব শেষের পরেও স্টলগুলি সরানো হয়নি। পূর্ত দফতরের হিসেব অনুযায়ী, স্টলগুলি বানাতে প্রায় ৮৬ হাজার ইট, ৮৬ হাজার টালি, প্রচুর দরমা, বাঁশ, শালের খুঁটি, টিন লেগেছিল। এ ছাড়া উৎসবে আসা মানুষজনের পানীয় জলের ব্যবস্থা করার জন্য বসানো হয়েছিল বেশ কিছু অস্থায়ী ট্যাপকল।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, উৎসব শেষে স্টলগুলির নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। ওই দফতরের আধিকারিকেরা জানান, পাহারা দেওয়ার মতো লোকবল তাঁদের নেই। ও দিকে, পুলিশও জানিয়ে দেয়, টানা পাহারা দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী থানায় নেই। কোনও সমাধান সূত্র না বেরোনোয় মাস তিনেক ধরে কার্যত অরক্ষিত অবস্থায় পড়েছিল স্টলগুলি। সেই সুযোগ কাজে লাগায় দুষ্কৃতীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত কয়েক দিন ধরে এক এক করে সাফ হতে থাকে স্টলগুলি। শুক্রবার রাত পর্যন্ত মাঠ প্রায় ফাঁকা হয়ে যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, দুষ্কৃতীদের অনেকেই এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত। তাই সাধারণ মানুষ কোনও প্রতিবাদ করার সাহস দেখাননি। একই অভিযোগ তোলে সিপিএমও। তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে। স্টলগুলির নির্মাণ সামগ্রী চুরি হয়ে গিয়েছে খবর পেয়ে শনিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করে পূর্ত দফতর।
পুলিশ জানায়, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বিরুডিহার বাসিন্দা হরিময় পাত্রকে প্রথমে থানায় ডেকে জেরা করা হয়। রবিবার রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু টালি, ইট-সহ অন্য নির্মাণ সামগ্রী। সেগুলি থানায় নিয়ে আসা হয়। হরিময়কে জেরা করে বাকি দুষ্কৃতীদের খোঁজ পাওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। পুলিশের এক আধিকারিক জানান, বিরুডিহা ছাড়াও কাঁকসার মোল্লাপাড়ার কিছু লোকজন এই ঘটনায় জড়িত বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যে দুষ্কৃতীদের কাছ থেকে অনেকে কম দামে নির্মাণ সামগ্রী কিনেছেন। ওই আধিকারিক বলেন, “সম্ভবত ওই সব সামগ্রী এলাকাতেই রয়েছে। সে ভাবে বাইরে পাচার হয়নি। তাই সে সব উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে।” পুলিশ জানায়, এলাকায় তল্লাশি চলছে।
ধৃত ব্যক্তি এলাকায় তৃণমূল সমর্থক হিসেবে পরিচিত বলে অভিযোগ তুলেছে সিপিএম। দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা কাঁকসার সিপিএম নেতা বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, “আমরা আগেই বলেছিলাম, শাসকদলের কর্মী-সমর্থকরাই এই ঘটনায় জড়িত। তা এ বার প্রমাণ হয়ে গেল।” তৃণমূল অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দলের এক নেতা বলেন, “সবাই এখন শাসকদলের অনুগত। কাজেই সিপিএমের এমন অভিযোগ আসলে অতি সরলিকরণ করে ফেলা।” দলের অন্যতম জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি দেবদাস বক্সী বলেন, “পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দোষীরা কেউ ছাড়া পাবে না।”