ফের সক্রিয় বিরোধীরা, তাই অর্থপূর্ণ মঙ্গলকোট

বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন এসেছিলেন বেশ কয়েক বার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মঙ্গলকোটে প্রথম পা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ হেলিকপ্টারে চড়ে মঙ্গলকোটের নতুনহাটে এসে নামেন তৃণমূল নেত্রী। হেলিপ্যাডের পাশেই সভাস্থল। অনুব্রত মণ্ডল-সহ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে সেখান থেকে মঞ্চে পৌঁছন মমতা। মাঠে তখন উপচে পড়ছে ভিড়।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০০:১৮
Share:

বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন এসেছিলেন বেশ কয়েক বার। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মঙ্গলকোটে প্রথম পা রাখলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ হেলিকপ্টারে চড়ে মঙ্গলকোটের নতুনহাটে এসে নামেন তৃণমূল নেত্রী। হেলিপ্যাডের পাশেই সভাস্থল। অনুব্রত মণ্ডল-সহ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে সেখান থেকে মঞ্চে পৌঁছন মমতা। মাঠে তখন উপচে পড়ছে ভিড়। এই গরমের দুপুরে মাঠ ভরবে কি না, সে নিয়ে মঙ্গলবারই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা। তাঁদের মুখে এ দিন চওড়া হাসি।

বাম আমলে রাজ্যের যে সব এলাকায় সিপিএমের বিরুদ্ধে লাগাতার সন্ত্রাসের অভিযোগ উঠত, তার মধ্যে অন্যতম এই মঙ্গলকোট। ২০০৯ সালের অগস্টে মঙ্গলকোটে খুদরুন মোড়ে এসে তৃণমূলের রাজ্য স্তরের নেতারা হেনস্থা হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। তার পরে ওই মোড়ে সভা করেন মমতা। তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরের মতো মঙ্গলকোটও দিদির অন্তরের জায়গা। আমরা বিধানসভা ভোটে এখানে হারার পরেও মঙ্গলকোটে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছে রাজ্য সরকার।” স্থানীয় তৃণমূল নেতারা জানান, ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটের আগে শেষ যে বার মঙ্গলকোটে এসেছিলেন মমতা, ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হলে ফের আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন। তাই সুযোগ পেয়ে ছুটে এলেন।

Advertisement

দলের অনেক নেতা আবার জানান, লোকসভা ভোটের আগে মঙ্গলকোটে সভা করার পিছনে ভৌগলিক কারণও রয়েছে। বর্ধমানের তিনটি বিধানসভা কেন্দ্র মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম ও আউশগ্রাম বোলপুর লোকসভার অধীন। মঙ্গলকোট লাগোয়া এলাকা বীরভূমের নানুর ও লাভপুর। পাশে রয়েছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের ভাতার ও মন্তেশ্বরের একাংশ। আবার বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত কাটোয়া বিধানসভা এলাকাও তৃণমূলের এ দিনের সভাস্থলের অদূরেই। লোকসভা ভোটে তৃণমূলের মঙ্গলকোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা তথা দলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি রানা সিংহ বলেন, “মঙ্গলকোটে সভা মানে বোলপুর ছাড়াও বর্ধমান-দুর্গাপুর ও বর্ধমান পূর্ব লোকসভা কেন্দ্রে প্রচারের সুযোগ। তাই এখানে সভা করা হল।”

গত বিধানসভা ভোটে জেলার অধিকাংশ কেন্দ্র তৃণমূল দখল করলেও মঙ্গলকোট ও আউশগ্রামে জেতে সিপিএম। তেমনই কাটোয়া দীর্ঘদিন কংগ্রেসের দখলে। গত কয়েক দিন ধরে মঙ্গলকোটে সিপিএমের বিরুদ্ধে বারবার গোলমাল পাকানোর অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মঙ্গলকোটের একটি অংশে সিপিএম ফের সক্রিয় হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমাল। পঞ্চায়েত ভোটের সময়েও মঙ্গলকোট ও নানুরে তা নিয়ে বিবাদ বেধেছে। রানা সিংহ বলেন, “এই এলাকায় সিপিএম বা কংগ্রেস নেই, এ কথা বলা যাবে না। সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে রাজনৈতিক ভাবেও খুব গুরুত্বপূর্ণ এই সভা।”

বিধানসভা ভোটের আগে মঙ্গলকোট, নানুর, ভাতার, কেতুগ্রামে সন্ত্রাস হয়েছিল বলে এ দিন অভিযোগ করেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর বক্তৃতা চলাকালীন এ দিন মঞ্চের কাছে এসে ক্ষোভ জানাতে থাকেন মঙ্গলকোটের গোহগ্রামের বাসিন্দা রূপা মোদক। তাঁর অভিযোগ, “আমার স্বামী ২০ বছর আগে খুন হয়েছেন। বিচার হয়নি। কিছুই পাচ্ছি না। খুব কষ্টে আছি।” মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চ থেকে মাথা নিচু করে বলেন, “এখন তো কিছু করা সম্ভব নয়। ভোট শেষ হলে আমার বাড়ি আসবেন। আপনার সব কথা শুনব।”

সিপিএমের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের এ বারের সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। তাঁর পাল্টা দাবি, “মঙ্গলকোট, নানুর, কেতুগ্রামে তো ওরাই সন্ত্রাস করত। এখনও করছে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement