জয়ী গৌর মণ্ডল। ছবি: বিকাশ মশান।
লোকসভা নির্বাচনের হাওয়া ছুঁয়ে গেল গলসি বিধানসভা ভোটকেও।
প্রার্থী নিয়ে দলের একাংশের অসন্তোষ, প্রার্থীর সরে যেতে চাওয়া, শেষে দলীয় নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে মনোনয়ন দাখিলফলে অবশ্য কোনওটারই বিশেষ ছাপ পড়ল না। জয়ী হলেন তৃণমূলের গৌরচন্দ্র মণ্ডল। ফরওয়ার্ড ব্লকের নন্দলাল পণ্ডিতকে হারালেন প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ভোটে। ছ’দশকেরও বেশি বামেদের দখলে থাকা গলসি হাতছাড়া হল।
১৯৫২ সালের প্রথম নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জয়ী হন কংগ্রেস প্রার্থী। তারপর থেকে এতদিন গলসি ছিল বামেদের। বরাবর জিতেছেন ফরোয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক পেয়েছিলেন ৮৬৬৯৩ টি ভোট। ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতাবদলের মধ্যেও জিতেছিলেন সুনীল মণ্ডল। প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী জয়দেব সাহা পেয়েছিলেন ৮১২৭২টি ভোট। পরে গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যসভার নির্বাচনে সুনীলবাবু তৃণমূল প্রার্থীর পক্ষ নেন। দিন কয়েকের মধ্যেই বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলে যোগ দেন তিনি। ৩০ এপ্রিল কাঁকসা ব্লকের চারটি এবং গলসি’র ১১টি পঞ্চায়েত এলাকা নিয়ে গঠিত গলসিতে উপনির্বাচন হয়।
কাঁকসা হাইস্কুলের শিক্ষক সুনীলবাবুর জায়গায় তৃণমূল প্রার্থী করে তাঁর সহকর্মী তথা ‘পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতি’র জেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য গৌরচন্দ্র মণ্ডলকে। সর্বক্ষণের কোনও কর্মীকে প্রার্থী না করায় ক্ষোভ দেখা দেয় দলের একাংশে। এমনকী প্রচারের নামেননি দলের অনেকেই। পরিস্থিতি দেখে একসময় গৌরবাবু নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন। তবে দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, শারীরিক কারণে একসময় ভোটে লড়া নিয়ে দ্বিধায় পড়েছিলেন গৌরবাবু। পরিস্থিতি সামাল দিতে পানাগড়ে প্রচারে এসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দলের কর্মী-সমর্থকদের উপরে চাপ সৃষ্টি করে বলেন, “আগের বিধানসভায় সারা বাংলা জুড়ে তৃণমূলের ঝড় ছিল। কিন্তু গলসির মানুষ জিতিয়েছিলেন ফরোয়ার্ড ব্লকের সুনীল মণ্ডলকে। তিনি এখন আমাদের দলে। তাই গলসিতে এ বার জিততেই হবে। এটা ইজ্জতের প্রশ্ন।”
আবার ফরওয়ার্ড ব্লকের প্রার্থী নন্দলাল পণ্ডিতকে নিয়েও দলের একাংশের ক্ষোভ ছিল। স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের বক্তব্য ছিল, স্থানীয় কেউ হলে তাঁকে সবসময় পাওয়া যেত। নন্দলালবাবুর অবশ্য দাবি, দলীয় কাজকর্মে বহুবার গলসিতে এসেছেন তিনি। ফলে সমস্যা হবে না। তবে শুক্রবার, ফল বেরোতে দেখা গেল কর্মীদের আশঙ্কায় সত্যি। নন্দলালবাবুর অবশ্য যুক্তি, “ব্যাপক হারে বুথ দখল ও ছাপ্পা ভোট হয়েছিল। ৪০-৪৫ টি বুথে আমরা পুননির্বাচন চেয়েছিলাম।”
এ দিন গৌরবাবুর প্রাপ্ত ভোট ৭৭৭৬৪। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নন্দলালবাবু পেয়েছেন ৬৯৩০৭ ভোট। জয়ের ব্যবধান ৮৪৫৭। এছাড়া বিজেপি প্রার্থী সুন্দর পাসোয়ান ৩৪৪৬৯ এবং কংগ্রেস প্রার্থী স্বপন মালিক পেয়েছেন ৮৯৫৭টি ভোট। সন্ধ্যায় বিজয়োৎসবে সামিল হয়ে কাঁকসা ব্লকের যুব সভাপতি পল্লব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ভোটের আগে-পরে অনেকে অনেক কথা বলেছিলেন। সব ভিত্তিহীন। মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তা ফের প্রমাণ হল।”আর প্রার্থী গৌরবাবু বলেন, “গত বার লড়াই ছিল ত্রিমুখি। তা এবার চর্তুমুখী হয়েছে। জেতা বেশ কঠিন ছিল। তার উপরে সুনীলবাবুর লোকসভার ভোটটা মেকআপ করেই তো জিততে হয়েছে।”
(সহ প্রতিবেদন রানা সেনগুপ্ত)