খনিগর্ভে আগুন, ছুটি চলায় রক্ষা বিপদ থেকে

দিন দু’য়েক আগে মাটি থেকে প্রায় সাড়ে ন’শো ফুট গভীরে আগুন লেগেছিল ঝাঁঝরা কোলিয়ারির একটি পিটে। শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয় বালি ফেলে আগুন নেভানোর কাজ। রবিবার আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার স্বার্থে লাগোয়া দুটি ইনক্লাইন বন্ধ করে দিয়েছে ইসিএল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৩
Share:

খনি থেকে বেরিয়ে আসছে ধোঁয়া। শনিবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

দিন দু’য়েক আগে মাটি থেকে প্রায় সাড়ে ন’শো ফুট গভীরে আগুন লেগেছিল ঝাঁঝরা কোলিয়ারির একটি পিটে। শনিবার সকাল থেকেই শুরু হয় বালি ফেলে আগুন নেভানোর কাজ। রবিবার আগুন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানান কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার স্বার্থে লাগোয়া দুটি ইনক্লাইন বন্ধ করে দিয়েছে ইসিএল।

Advertisement

কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে ঝাঁঝরা এমআইসি খনির ১ নম্বর পিটের আর ৭ এ সিমে আগুন লাগে। পুজোর ছুটি চলায় শুধুমাত্র জরুরি বিভাগের কর্মীরাই ছিলেন সে দিন। আচমকা রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ একটি হাওয়া চানক দিয়ে আগুন ও ধোঁয়া বেরোতে দেখেন তাঁরা। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় কর্তৃপক্ষকে। খনির ম্যানেজার প্রসূন ঝা সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিয়ে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেন। শনিবার সকালে চানক দিয়ে বালি ফেলা শুরু হয়। সঙ্গেসঙ্গেই খনির ভিতরে যে অংশে আগুন লেগেছে তা পাকাপাকি ভাবে আলাদা করে দেওয়ার কাজও শুরু হয়। রবিবার সকাল থেকে আগুন ও ধোঁয়ার তীব্রতা কমতে থাকে। বিকালে নাইট্রোজেন গ্যাস পাঠানোর কাজ শুরু হয়। সন্ধ্যার দিকে ধোঁয়া বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়। ওই সিমের ভিতরে বেশ কিছু পরিমাণ কাটা কয়লা পড়ে ছিল বলে কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে। তাছাড়া কাজ করার জন্য কাঠ, ডিজেল ইত্যাদিও ভিতরে নিয়ে যান কর্মীরা। সম্ভবত সে সবের কিছুটাও ভিতরে পড়ে ছিল। ছিল একটি পরিত্যক্ত কনভেয়ার বেল্টও। কোলিয়ারি কর্তৃপক্ষের দাবি, কোনও কারণে খনির তাপমাত্রা মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যাওয়ায় ভিতরে আগুন লাগে। ইসিএল সূত্রে খবর, ভূগর্ভে কয়লার কার্বন এবং অক্সিজেনের মিশ্রনে অক্সিডেশন ঘটে থাকে। ফলে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। তা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেই আগুন ধরে যায়। কিভাবে আগুন লেগেছে তা তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন খনির এক আধিকারিক।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, এমআইসিতে আগুন লাগলেও নিরাপত্তার কারণে ওই খনি লাগোয়া ১ ও ২ ইনক্লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার টন কয়লা উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেনারেল ম্যানেজার অবোধকুমার মিশ্র জানান, তৎপরতার সঙ্গে আগুন ও ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণের কাজ করা হয়েছে। দ্রুত খনি চালু হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। অবোধবাবু বলেন, “আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ডিজিএমএসের ছাড়পত্র পেলেই খনির উৎপাদন চালু হবে।”

Advertisement

বাঁকোলা এরিয়া উদ্ধারকারী দলের নেতা কেশবচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, আগুন নেভাতে প্রথমে খনির প্রবেশ পথ দিয়ে অক্সিজেনের প্রবাহ যাতে ওই অংশে পৌঁছাতে না পারে তা সুনিশ্চিত করা হয়। সেজন্য করগেটের সিট এবং বেন্টুনাইট ও সিমেন্ট দিয়ে দুর্ঘটনাগ্রস্ত অংশটিকে পাকাপাকি ভাবে আলাদা করে দেওয়া হয়। এছাড়া সংলগ্ন তিনটি পিট বালির বস্তা ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি দেওয়াল দিয়ে আলাদা করা হয়। ফলে অক্সিজেনের প্রবাহ থেমে যায়। রবিবার বিকালে ধোঁয়া বেরোনো বন্ধ হয়ে যায়। তবে ফের যাতে আগুন না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য নাইট্রোজেন ছড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় শনিবার খনি পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। তিনি জানান, ছুটি ছিল বলে বড়সড় দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। খনির নিরাপত্তা আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement