অপেক্ষাই সার। গড়াল না চাকা। কাটোয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
বাসভাড়া নিয়ে বচসায় বাসকর্মীদের মারধরের অভিযোগে শুক্রবার আচমকা বাস বন্ধ করে দিলেন বাসকর্মীরা। যার জেরে কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে দিনভর বাসের চাকা গড়াল না। ফলে, সমস্যায় পড়লেন যাত্রীরা। মালবাহী গাড়িতে অনেক বেশি টাকা গুনে গন্তব্যস্থলে যেতে হল তাঁদের। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিকেলে স্থানীয় ও দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও কাটোয়া-বর্ধমান রুটের বাস চলাচল নিয়ে জটিলতা রাত পর্যন্ত কাটেনি।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ বর্ধমান-কাটোয়া রুটে বনকাপাশি বাসস্টপে কাটোয়ামুখী বাস আটকে বাসকর্মীদের স্থানীয় যাত্রী ও তাঁর সঙ্গীরা মারধর করে বলে অভিযোগ। কয়েক জন নিত্যযাত্রী বাসকর্মীদের বাঁচাতে গেলে তাঁদেরকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। এর পরে কৈচর ফাঁড়িতে মৌখিক অভিযোগ জানালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি, এই অভিযোগ তুলে শুক্রবার সকাল থেকে বাস চালাবে না বলে আন্দোলন শুরু করেন বাসকর্মীরা। তাঁরা জানান, কৈচর থেকে এক দম্পতি বাসে ওঠেন। তাঁরা বনকাপাশিতে নামার আগে নির্দিষ্ট ভাড়ার চেয়ে কম টাকা দিতে চাইলে কন্ডাক্টরের সঙ্গে বচসা হয়। ওই বাসের কর্মীদের অভিযোগ, কম ভাড়া নেওয়ার পরেও বনকাপাশিতে নামার পরে ওই যাত্রী এলাকার লোকজন নিয়ে বাস আটকে দেন। কর্মীদের মারধর করা হয়।
বাসকর্মী নিতাই হাজরা, ঝন্টু দেবনাথদের অভিযোগ, “আমাদের মারধরের পরে ওরা বলে, কাল (শুক্রবার) যখন আসবি, তখন গাড়ি আটকে ফের দেখব।” এ রকম ঘটনা ঘটেছে শোনার পরেই শুক্রবার ভোরে কাটোয়া-বর্ধমান রুটের বাসকর্মীরা কাটোয়া বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে চলে যান। অন্য বাসকর্মীদেরও কাজে যেতে বারণ করে দেন সহকর্মীরা। ফলে, কাটোয়া-বর্ধমান রুটের ৮৫টি বাস-সহ বোলপুর, সিউড়ি, আসানসোল, বেনাচিতি, কৃষ্ণনগর, মেমারি, বহরমপুর রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বাস কাটোয়ায় না ঢুকে ছোটলাইন মোড়ের কাছে যাত্রী নামিয়ে দেয়। তাতে সেখানে যানজট হয়। কাটোয়া বাসমালিক সংগঠনের নেতা নারায়ণচন্দ্র সেন বলেন, “কর্মীরা নিরাপত্তার অভাবে বাস চালাতে চায়নি।” দুপুরের পরে কাটোয়া মহকুমা প্রশাসন বাসকর্মী সংগঠন ও বাসমালিক সমিতির সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলে। মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার বলেন, “বাস চলাচল শুরু করেছে। বাসকর্মীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।”
হঠাৎ বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টির মধ্যে সমস্যায় পড়েন কলেজের পরীক্ষার্থীরা। কাটোয়া বাসস্ট্যান্ডের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন কলেজ পড়ুয়া জানান, তাঁদের পরীক্ষা রয়েছে। বাস না পেয়ে মুশকিলে পড়েছেন। বহরমপুর থেকে বর্ধমান যাওয়ার জন্য বাসে উঠেছিলেন সোহিনী মুখোপাধ্যায়। সকাল ন’টা নাগাদ কাটোয়া ছোটলাইন পাড়ে নেমে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমি একা রয়েছি। আগে এমন অবস্থায় পড়িনি। ভয় করছে।” কোনও এক যাত্রীর দোষের জন্য সবাইকে এ ভাবে দুর্ভোগে কেন ফেলছেন বাসকর্মীরা, সে প্রশ্ন তোলেন যাত্রীরা। বাসকর্মীরা অবশ্য বলেন, “যাতে যাত্রী থেকে প্রশাসন, সবাই আমাদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখেন, তাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এই ফাঁকে মালবাহী গাড়িগুলি যাত্রীদের কাছে বর্ধমান যাওয়ার জন্য ৭০-১০০ টাকা ভাড়া নিচ্ছিল। কেতুগ্রামের ফুটিসাঁকো যাওয়ার জন্য যাত্রীরা গুনছিলেন ৪০ টাকা। লরিতে দাঁড়িয়ে এক যাত্রী বলেন, “আমার বাবা বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি। এ ভাবে যাওয়া ছাড়া তো উপায় নেই!”