প্লাস্টিক বন্ধের অভিযানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে পড়লেন প্রশাসন ও পুরনিগমের কর্তারা। আসানসোল বাজারে রবিবার মহকুমাশাসকের নিরাপত্তারক্ষীকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস এমন ঘটনা অনভিপ্রেত বলে জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, প্লাস্টিক বন্ধে অভিযান চলবে।
গত কয়েক দিন ধরেই প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে প্লাস্টিক বন্ধে নানা এলাকায় অভিযান চালাচ্ছে নবগঠিত আসানসোল পুরনিগম। কুলটি, বরাকর, বার্নপুর, নিয়ামতপুর থেকে রানিগঞ্জ— নানা এলাকায় বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সচেতন করা হয়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আসানসোল বাজারেও এর আগে তিন বার অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে প্লাস্টিকের জিনিসের পাইকারি বাজার মুন্সি বাজারে দিন চারেক আগে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে আসেন আধিকারিকেরা। প্লাস্টিক বন্ধ না করলে তা শীঘ্র বাজেয়াপ্ত করার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয় সে দিন।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মেয়র ও মহকুমাশাসক হঠাৎই মুন্সি বাজারে হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের কিছু সদস্য। তাঁরা বিভিন্ন দোকান থেকে প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করতে শুরু করেন। আর তাতেই গোল বাধে। বাধা দিতে শুরু করেন কিছু ব্যবসায়ী। আশপাশের দোকান থেকেও জনা কয়েক বেরিয়ে এসে ঘিরে ধরে অভিযান বন্ধের দাবি জানাতে থাকে। এ নিয়ে তর্কাতর্কি শুরু হয়। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের সদস্যেরা বিক্ষোভকারীদের বিরত করতে গেলে তারা চড়াও হয়। ধস্তাধস্তি শুরু হলে মহকুমাশাসকের নিরাপত্তারক্ষী এগিয়ে যান। তখন তাঁকে ধাক্কাধাক্কি করা হয় বলে অভিযোগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আশপাশের কিছু প্রবীণ ব্যবসায়ী এসে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের সরিয়ে নিয়ে যান। তাঁরা মেয়র এবং মহকুমাশাসকের কাছে ক্ষমাও চান। পরে আসানসোল দক্ষিণ থানায় গিয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেন মহকুমাশাসকের রক্ষী। মহকুমা শাসক অমিতাভ দাস বলেন, ‘‘ওরা আমার নিরাপত্তারক্ষীকে হেনস্থার চেষ্টা করেছেন। অভিযানে থাকা অসামরিক প্রতিরক্ষা সদস্যদের সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করেছেন। এ ভাবে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া অন্যায়।’’ শহরের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘যে কাজে গিয়েছিলাম সেটি ভাল কাজ। মানুষের হিতার্থে আমরা এই কাজ করছি। কিন্তু কয়েক জন বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে তাতে আমরা থেমে থাকব না।’’
নামপ্রকাশ না করার শর্তে মুন্সি বাজারের কয়েক জন ব্যবসায়ী পরে দাবি করেন, দিন চারেক আগে যখন অভিযান হয়েছিল তখন তাঁরা প্রশাসনের কর্তাদের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন, সদ্য প্লাস্টিকের জিনিস আনা হয়েছে। তা বিক্রির জন্য সাত-দশ দিন সময় প্রয়োজন। সেগুলি বিক্রি হয়ে গেলেই প্লাস্টিকের কারবার বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু চার দিনের মাথায় ফের এসে পুরনিগম ও প্রশাসনের কর্তারা প্লাস্টিক বাজেয়াপ্ত করা শুরু করলে ব্যবসায়ীদের একাংশ খেপে ওঠেন। তার জেরেই এমন ঘটেছে বলে তাঁদের দাবি। পুলিশ জানায়, অজ্ঞাত পরিচয় কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরু হয়েছে।