এখানেই ঘটে দুর্ঘটনা। নিজস্ব চিত্র।
ভাঙাচোরা, খন্দে ভরা রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ ছিল। প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কাও করছিলেন পথচারীরা। শনিবার রাতে কালনার বিপজ্জনক এসটিকেকে রোডের গর্তে মোটরবাইক নিয়ে পড়ে যান এক যুবক। ট্রাকে পিষে প্রাণ যায় তাঁর। মৃত কৌশিক ভৌমিক (২৬) কালনা ১ ব্লকের নান্দাই এলাকার বাসিন্দা। রাস্তা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছে মৃতের পরিবারও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার রাত ৯টা নাগাদ কালনা থেকে মোটরবাইকে বাড়ি ফিরছিলেন কৌশিকবাবু। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী তাপসী ভৌমিক এবং স্ত্রীয়ের এক বান্ধবী। তাঁরা জানান, শহরের একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে একটি ট্রাককে পাশ কাটাতে গিয়ে গর্তে পড়ে যায় বাইকটি। নিয়ন্ত্রণ হারান কৌশিকবাবু। বাইকটি পিছলে ট্রাকের নীচে ঢুকে পড়ে। ঘটনাস্থলেই পিষে যান ওই যুবক। তবে তাঁর স্ত্রী ও আর এক মহিলা রাস্তার উল্টো দিকে ছিটকে পড়ায় প্রাণে বেঁচে যান।
রবিবার তাপসীদেবী বলেন, ‘‘রাস্তার কারণেই স্বামীকে হারাতে হল। নেতারা ভোটের সময়ে ভোট নেন। রাস্তার অবস্থার দিকে ফিরেও তাকান না।’’ তরতাজা নাতিকে হারিয়ে শোকাহত নগেন্দ্র ভৌমিক। বছর তিনেক আগের আর একটি দুর্ঘটনা মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর। তিনি জানান, এসটিটিকেকে রোডের গোয়ালপাড়া এলাকায় গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁর আর এক ছেলেরও। এ বার নাতিকে হারিয়ে পুরো পরিবারের কাছেই রাস্তাটি আতঙ্কের।
রাস্তা নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দা দেবু হালদার, অরিন্দম ভৌমিকেরাও। তাঁদের কথায়, ‘‘কালনা থেকে নান্দাই পর্যন্ত রাস্তা জুড়ে বড় বড় গর্ত। সাধারণ মানুষ বিপজ্জনক রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। অজস্র গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। তবুও প্রশাসন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’’ তাঁদের দাবি, হাসপাতাল, আদালত-সহ নানা জায়গায় পৌঁছতে বহু ক্ষণ লাগছে। রাস্তার যা অবস্থা আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে, দাবি তাঁদের।
সম্প্রতি মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে এসটিটিকেকে রোড নিয়ে একটি প্রশাসনিক বৈঠক হয়। সেখানে প্রশ্ন ওঠে, কবে কালনা ২ ব্লকের পূর্বসাতগাছিয়া এলাকা থেকে ২০ কিলোমিটার রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হবে। মেরামতির কাজ শুরু না হওয়ায় ক্ষোভ জানান সাধারণ মানুষও। পূর্ত দফতরের কর্তার জানান, বৃষ্টির জন্য রাস্তার কাজ করতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে। কালীপুজোর পরে পাকাপাকি কাজ শুরু হবে বলে আশ্বাস দেন। দুর্গাপুজোর আগে গর্তগুলি মেরামত করে দেওয়ার কথাও জানানো হয়। যদিও এখনও পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। কালনার এক চিকিৎসকের কথায়, ‘‘রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ অন্তঃসত্ত্বা কেউ চিকিৎসার প্রয়োজনে শহরে এলে চরম কষ্টে পড়তে হচ্ছে।’’
মহকুমাশাসক সুমন সৌরভ মোহান্তি বলেন, ‘‘গর্ত মেরামতের কাজ দ্রুত শুরু করার চেষ্টা হচ্ছে।’’