মৃত সিপিএম কর্মী। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতে ভোটদান পর্ব শুরু হওয়ার আগেই রাজনৈতিক উত্তাপে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম। শুক্রবার সেখানে তৃণমূল-সিপিএম সংঘর্ষে আহত হয়েছিলেন দু’পক্ষেরই বেশ কয়েক জন। গুরুতর আহত হয়েছিলেন সিপিএম কর্মী রাজিবুল হক (৩২)। শনিবার সকালে কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে মারা গেলেন তিনি। শুক্রবার আউশগ্রাম-২ নম্বর ব্লকের বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭ নম্বর বুথে তৃণমূল সিপিএম সংঘর্ষে রাজিবুল জখম হয়েছিলেন। প্রথমে তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ার কারণে গভীর রাতে তাঁকে এনআরএসে স্থানান্তরিত করানো হয়। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় আউশগ্রাম থানার পুলিশ দু’জনকে আটক করেছে। অভিযুক্তদের এক জন, শেখ আব্দুল হোসেন (২৮) আউশগ্রামের বিষ্ণুপুর গ্রামের বাসিন্দা। অন্য অভিযুক্ত ওজালালউদ্দিন মোল্লার বাড়ি বেলেমাঠ গ্রামে।
শুক্রবারের অশান্তির পর শনিবারও থমথমে ছিল বিষ্ণুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটগ্রহণ কেন্দ্রটি। এখানে মোট তিনটি বুথ। ৭, ৭এ এবং ৮। শুক্রবার বুথে ভোটকর্মীরা ঢোকার পরই তৃণমূল এবং সিপিএমের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অশান্তি বাধে। লাঠিসোঁটা নিয়ে দু’পক্ষই একে অপরের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। দু’পক্ষের বেশ কয়েক জন আহত হন। পরে আউশগ্রাম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ভোরে এখানে এসে পৌঁছন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা। শনিবার দেখা যায় সকাল থেকে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন ভোটারেরা। সক্রিয় রয়েছেন তৃণমূল এবং সিপিএম— উভয় দলের সমর্থকেরাই।
রাজিবুলের পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, তাঁরা চার ভাই। রাজিবুল নিজে গ্রামে থাকতেন না। মুম্বইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। উৎসব বা পরবে তিনি গ্রামে ফিরতেন বলে জানান তাঁর পরিবারের লোকজন। রাজিবুলের দুই ছেলে। সেখ রাহান বড়, বয়স ১০ বছর। আর ছোট ছেলে আয়ুশের বছর সাড়ে তিন বছর। এ ছাড়াও পরিবারে স্ত্রী আনারকলি, মা আনিশা বিবি ও বাবা সেখ মোজাম্মেল রয়েছেন।
রাজিবুলের বাড়ি বিষ্ণুপুর গ্রামের ডাঙাপাড়ায়। রাজিবুলের ভাই আজহারউদ্দিন জানান, বুথে ভোটকর্মীরা ঢুকলে তারা ভোটকর্মীদের বলতে গিয়েছিলেন, যাতে নিরপেক্ষ ভাবে ভোট করা হয়।অভিযোগ, হঠাৎই তৃণমূলেরর কর্মীসমর্থক ও কিছু নেতা লাঠি রড, ইট-পাটকেল নিয়ে তাঁদের উপর আক্রমণ করেন। রডের আঘাতে রাজিবুল ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন। অনেকক্ষণ পর তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই রাজিবুলকে রেফার করা হয় কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে। সেখানেই শনিবার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুর খবর গ্রামে আসতেই শোকের ছায়া নামে গোটা গ্রামে। এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছে।