সাজ চলছে প্রতিমার। নিজস্ব চিত্র।
চিরাচরিত মূর্তির থেকে খানিকটা আলাদা এই মূর্তি। দুর্গার বাহন সিংহের মুখে ঘোড়ার আদল। দেবীর নামও ছোট দেশকি মাতা।
শোনা যায় একবার বর্ধমানের রাজাকে বড় বিপদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন মন্তেশ্বরের কাইগ্রামের বসু পরিবারের দুই সদস্য। খুশি হয়ে প্রচুর ভূসম্পত্তি দেন রাজা। দেন রাধাকান্তের (রাধাকৃষ্ণ) মূর্তিও। সেই টাকাতেই গ্রামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। যেহেতু গ্রামের আর একটি দুর্গাপুজোর নাম বড় দেশকি মাতা। তাই এ পুজোর নাম দেওয়া হয় ছোট দেশকি মাতা।
শরিকি বিবাদ, অর্থ কষ্টে বেশির ভাগ পারিবারিক পুজোই যেখানে জৌলুস হারাচ্ছে, সেখানে কিছুটা ব্যতিক্রমী এই পুজো। মন্দিরের গায়ে আটকানো ফলক থেকে জানা যায়, মন্দিরটি প্রায় দুশো বছরের পুরনো। বসু পরিবারের সদস্যেরা জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ অভিরাম দাস মুন্সি এবং সন্তোষরাম বসু মুন্সি বর্ধমান রাজার কর্মী ছিলেন। তাঁরাই এই পুজোর প্রবর্তক। বড় দেশকি মাতার চালচিত্রের খানিকটা অংশ কেটে এনেই নাকি এ মূর্তি তৈরি করা হয়। এখনও বংশ পরম্পরায় দেবীর মূর্তি তৈরি, পুজো, ঢাক বাজানো, ফুল তোলার কাজ করেন গ্রামের কিছু পরিবার। বিসর্জনের দিনে দেবীকে কাঁধে তুলে গ্রামে ঘোরান শোলাকুড়া পাড়ার বাসিন্দারা। রেওয়াজ অনুযায়ী, বিসজর্নের পরে বাড়ির রাধাবিনোদ মন্দিরে গীতা পাঠ শোনেন বসু পরিবারের সদস্যেরা।
জানা যায়, পুজোর চার দিন দেবীকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ভাত, শুক্তো, খিচুরি, পোলাও থেকে পায়েস এবং চাটনির ভোগ দেওয়া হয়। গ্রামের বাসিন্দারা জানান রীতি অনুযায়ী, বড় দেশকি মাতার পুরোহিত, ঢাকি প্রথমে পৌঁছন ছোট দেশকি মাতার মন্দিরে। সেখান থেকে ছোট দেশকীিমাতার পুরোহিত, ঢাকিকে নিয়ে তাঁরা পৌঁছন কাছাকাছি দিঘিতে। ওই দিঘি থেকেই জল ভরা হয় দেবীর ঘটে। এর পর দুই দেবীকে কাঁধে চড়িয়ে ঘোরানো হয় গোটা গ্রাম। পরিবারের সদস্য শুভ্রকান্তি বসু বলেন, ‘‘ছোট দেশকি মাতার পুজো সমস্ত রেওয়াজ মেনেই করা হয়। পারিবারিক পুজো হলেও গ্রামের সমস্ত মানুষ চার দিনই যোগ দেন পুজোয়।’’