প্রতীকী ছবি।
পাখির চোখ পুরভোট। তার আগে আমজনতার মন বুঝতে জেলার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘টিম পিকে’। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার তরুণ-তরুণীরা বিভিন্ন স্তরের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কিংবা শহরের পুরপ্রধানের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল, তা জানার চেষ্টা করছেন। এমনকি, ওই সব ওয়ার্ডের বিদায়ী বা বর্তমান কাউন্সিলরের বদলে কোন ‘মুখ’কে প্রার্থী করলে তৃণমূলের ভাল হবে, তার ‘নোট’ও নিচ্ছে ওই দল— এমনটাই দাবি করছেন দলের নিচুতলার কর্মীরা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। ওই ‘নোটে’ উঠে আসছে পুর-সমস্যার কথাও।
তৃণমূল সূত্রের খবর, অক্টোবর ও ডিসেম্বরে দলের কাছে বর্ধমান, কাটোয়া, কালনা, মেমারি, গুসকরা ও দাঁইহাট পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা পড়েছে। তাতে দলের একাধিক গোষ্ঠীর ভাবনা, বিরোধী মতাদর্শের রাজনীতি সচেতন মানুষের ভাবনা, প্রশাসনিক কর্তাদের ভাবনা, সবই রয়েছে। এ বার একেবারে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ভোটারেরা তাঁদের কাউন্সিলরকে নিয়ে কী ভাবছেন, সেটা জানার চেষ্টা করছে ‘টিম পিকে’। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দলের সর্বোচ্চ স্তরের কাছে তাদের রিপোর্ট জমা পড়ার কথা।
তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রত্যেক কাউন্সিলরের কাজের পাশাপাশি, ‘দুর্নীতি’ ও ‘অনিয়ম’-এর অভিযোগও জমা পড়বে। বিশ্লেষণকারী সংস্থার নজরে কোন কাউন্সিলরকে বাদ দেওয়া প্রয়োজন, তাঁর জায়গায় কাকে প্রার্থী করলে দলের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে, রিপোর্টে উল্লেখ থাকবে তা-ও। ওই রিপোর্টের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেই দলের শীর্ষ নেতৃত্ব প্রার্থী ঠিক করবেন বলে জানা গিয়েছে।
পূর্ব বর্ধমানের ছ’টি পুরসভার গত পাঁচ বছরের কাজের খতিয়ান দেখছে পিকে-র দল। বর্ধমান পুরসভার ক্ষেত্রে প্রশাসক বসার পরে দলের বিদায়ী কাউন্সিলর, উপপুরপ্রধান, পুরপ্রধানের ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শহরে লোকসভা ভোটে দলের ফল খারাপ হওয়ার পিছনে মূলত ‘দ্বন্দ্ব’ কাজ করছে, বেশির ভাগ কাউন্সিলরের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য ছিল না, গোটা ভোট পর্বে ‘দল’ হিসেবে তৃণমূলকে পাওয়া যায়নি—এমন রিপোর্ট শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জমা পড়েছে বলে দাবি করছেন দলেরই নেতাদের একাংশ। এ বার কাজ শহরে দলের ভাবমূর্তি ফেরানো। সে ক্ষেত্রেও ‘টিম পিকে’ পরামর্শ দেবে বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল নেতাদের একাংশের দাবি, দিল্লির ভোটে ‘আম আদমি পার্টি’র জয়ের পিছনে প্রশান্ত কিশোরের কৌশল রয়েছে। এই রাজ্যেও তা কার্যকরী হবে বলে মনে করছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কয়েকজন কাউন্সিলরের ভূমিকা, আচার-আচরণ দলের ‘ক্ষতি’ করেছে। আবার দলের নেতারা ‘কাছের লোক’ বলে যাঁদের পুরসভায় কাজ দিয়েছেন, তাঁদের ঔদ্ধত্য অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারেরা ভাল ভাবে নিতে পারেননি। এ বার ভুল শোধরানোর পালা।
তৃণমূলের অন্দরেও কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অনেক ওয়ার্ডে ‘মুখ’ বদল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের কর্মীদের দাবি, এত দিন সংরক্ষিত আসনে বিদায়ী কাউন্সিলর বা ওয়ার্ডের প্রভাবশালী নেতার পরিবারের সদস্য বা পছন্দের কাউকে টিকিট দেওয়ার রেওয়াজ ছিল। এ বার চেনা পথে কাঁটা বিছানো থাকবে মনে হচ্ছে। ফলে, কোনও নেতাই ‘টিকিট’ দেওয়ার দায়িত্ব নিতে চাইছেন না।
যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, “পুরভোট নিয়ে এখনও দলীয় স্তরে আলোচনা শুরু হয়নি। তবে টিম পিকে বিভিন্ন ব্যাপারে এমনকি, প্রার্থিপদ নিয়েও মতামত দিতে পারে বলে জানি। শেষ সিদ্ধান্ত অবশ্য
দলনেত্রীই নেবেন।’’