জামালপুরের চৌবেড়িয়ার রুগ্ন সেতু। নিজস্ব চিত্র।
রাস্তা ১০ মিটার চওড়া। কিন্তু, তার উপরে থাকা সেতুটি চওড়ায় মাত্র সাড়ে চার মিটার। ডিভিসির সেচখালের উপরে ওই সেতুর দু’দিকে আবার রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। ফলে, মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে বলে দাবি স্থানীয়দের। সেতুর স্বাস্থ্যও খুব একটা ‘ভাল নয়’। এ সব কারণে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের চৌবেড়িয়াতে, মেমারি-তারকেশ্বর রাজ্য সড়কে নতুন সেতু তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে পূর্ত দফতর। প্রয়োজনীয় জমি হাতে আসার পরেই, সেতু নির্মাণের দরপত্র ডাকা হবে বলে ওই দফতর সূত্রে খবর।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত সেতুর সংযোগকারী রাস্তার জন্যে ০.৮৩ হেক্টর জমি প্রয়োজন। আট-দশজন জমির মালিকের সঙ্গে ভূমি দফতর কথা বলেছে। প্রশাসনের দাবি, জমি মালিকেরা জমি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চৌবেড়িয়ার ওই সেতুর উপরে দু’টি বড় দুর্ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৮-র ৬ অক্টোবর, মহাসপ্তমীর রাতে ঠাকুর দেখে গাড়িতে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন জামালপুরের পাঁচড়া গ্রামের রক্ষিত পরিবারের সদস্যেরা। সেতুর উপরে গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খালে পড়লে ওই পরিবারের ১০ জনের মৃত্যু হয়। দু’বছর পরে, অর্থাৎ, ২০১০-র ২ অক্টোবর সেতু ভেঙে পড়ে গেলে প্রাণ হারান হুগলির পোলবার ১০ জন শ্মশানযাত্রী। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, মাঝেমধ্যেই ওই সেতুর উপরে মোটরবাইক, পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রী বোঝাই গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ে।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, পরপর দু’টি বড় দুর্ঘটনা ঘটার পরে, নতুন সেতু তৈরির পরিকল্পনা হয়েছিল। মাঝে কয়েকবার সেতুর সংস্কার হয়েছে। তিন বছর আগে ওই রাস্তা চওড়া করা হয়। তার পরেই, সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট (ডিপিআর) তৈরি করে সংশ্লিষ্ট জায়গায় পাঠানো হয়। তার পরে, সেতু ও সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য সাড়ে আট কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানা যায়, এখন ওই রাস্তাটি ১০ মিটার চওড়া। কিন্তু চৌবেড়িয়ার সেতুটি চওড়ায় মাত্র সাড়ে চার মিটার। পূর্ত দফরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান ডিভিশন ২) কনককুমার সাহা বলেন, “রাস্তার তুলনায় সেতুটির অনেক কম চওড়া। রয়েছে বিপজ্জনক বাঁকও। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় নতুন সেতু তৈরির অনুমোদন পাওয়া গিয়েছে।’’ সেতুর জন্য জমি দিতে রাজি রক্ষিত পরিবারের দিলীপ রক্ষিত বলেন, “নতুন সেতু তৈরি হলে দুর্ঘটনা কমবে। আমাদের মতো কাউকে স্বজনহারার যন্ত্রণা পেতে হবে না। আট-দশজন জমির মালিককে প্রশাসন ডেকেছিল। আমরা জমি দেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানাইনি।’’
অন্য দিকে, দেড়-দু’বছর ধরে ভাতারের সামন্তী রোডের উপরে সংযোগকারী রাস্তা ও সেতু সংস্কারের জন্যে ৩০ লক্ষ টাকা পূর্ত দফতরে (সড়ক) এসে পড়েছিল বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। করোনা, বিধানসভা ভোট-সহ নানা কারণে সেতু সংস্কারের কাজে হাত দিতে পারেনি পূর্ত দফতর (সড়ক)। দফতর সূত্রে খবর, সেতু সংস্কারে ৪৫ দিন সময় লাগবে। চলতি মাস থেকেই ওই কাজে হাত দিতে চাইছে তারা। দফতরের হাইওয়ে ডিভিশন ২-এর সহকারী ইঞ্জিনিয়ার (ভাতার) নাড়ুগোপাল দাস বলেন, “সংযোগকারী রাস্তা ও সেতুর মধ্যে নীচের দিকে ফাটল রয়েছে। স্বাস্থ্যপরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেতুটি দুর্বল।’’
সেতুটি পরিদর্শন করেছেন ভাতারের বিধায়ক মানগোবিন্দ অধিকারী, বিডিও (ভাতার) অরুণকুমার বিশ্বাস। তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেতুর সংস্কার চলাকালীন পাশেই হিউম পাইপ দিয়ে যাতায়াতের অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে।