ফাইল চিত্র।
একটা সময় ছিল যখন রাজ্যের অন্যান্য জেলার পাশাপাশি পূর্ব বর্ধমান জেলাতেও হত পদ্মের চাষ। কিন্তু নগরায়নের জাঁতাকলে পড়ে ক্রমশ কমছে খাল, বিল ও জলাশয়। আর জলাশয় ঘাটতি ও প্রকৃতির বিরূপতার কারণে সঙ্কট তৈরি হয়েছে পদ্ম চাষে। এখন দিন যত গড়াচ্ছে, ততই বাড়ছে পদ্মের জোগানে ঘাটতি। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় হতাশা বাড়ছে পদ্ম চাষিদের মধ্যে।
পুজোর আর কয়েকটা দিন মাত্র বাকি। তার পরই দেবীপক্ষে আবির্ভূত হবেন দুর্গা। দেবীর চরণে পদ্ম তুলে দিতে এখন কঠোর পরিশ্রম করছেন চাষিরা। বছরের অন্য সময়ে পদ্মের চাহিদা তেমন না থাকলেও দুর্গাপুজোয় সময় চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। তখন এই রাজ্যের পুজো-সহ ভিন্রাজ্যের পুজোতেও পদ্মের জোগান দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। পদ্ম চাষি অমিত মালিক বলেন, ‘‘বসতির দাপটে জলাশয়ের ঘাটতি যে হয়েছে তা অস্বীকার করা যায় না। তবুও মুনাফার আসায় পূর্ব বর্ধমান জেলা-সহ বিভিন্ন জায়গার চাষিরা কেউ জলাশয় খুঁজে নিয়ে, আবার কেউ একটু নিচু চাষের জমিতে এখন পদ্ম চাষ করছেন।’’
সন্ত বেরার বাড়ি হাওড়া বাগনানে। তিনি পূর্ব বর্ধমানের বহু ফুল ব্যবসায়ীকে পদ্ম ফুল সরবরাহ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বড় জলাশয় বা দিঘির পরিবর্তে জল ধারণে সহায়ক চাষ জমি আমরা লিজে নিয়ে থাকি। সেখানেই বিশ্বকর্মা পুজোর আগে আমরা বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্ম চাষ শুরু করি। এই পদ্ধতিতে পদ্ম চাষের মেয়াদ থাকে চল্লিশ দিন। এই ভাবে চাষ করে গড়ে প্রতি দিন ১৫০-২০০ পিস করে পদ্ম পাওয়া যায়।’’
সন্তুর কথায়, ‘‘এখন পদ্ম ফুল চাষের খরচ আগের থেকে বেড়েছে। নিজের জমি থাকলে বিকল্প পদ্ধতিতে পদ্ম ফুলের চাষ করলে বিঘা প্রতি ১০ হাজার টাকার মত খরচ হয়। আর জমি লিজ নিয়ে পদ্ম চাষ করলে সেটা কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকায় দাঁড়াবে। বছরের অন্য সময়ে পদ্ম ফুলের চাহিদা তেমন একটা থাকে না। মূলত বিশ্বকর্মা পুজোর পর দুর্গাপুজো থেকে শুরু করে কালীপুজো পর্যন্ত চাহিদা বেশি থাকে।’’ সন্তু দাবি করেন, এ বছর বিশ্বকর্মা পুজোর কয়েক দিন পর থেকে প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে রোদ না থাকা ও টানা বৃষ্টিপাতের জেরে পদ্ম চাষে ক্ষতি হয়েছে। নষ্ট হয়ে গিয়েছে পদ্মের কুঁড়ি ও পাতা। এর জন্য পুজোর বাজারে পদ্মের জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
একই আশঙ্কার কথা শুনিয়েছেন ভাতারের নতুন গ্রামের পদ্ম চাষি অমিত মালিক। তিনি বলেন, ‘‘জলাশয়ে চৈত্র থেকে অগ্রহায়ন মাস পর্যন্ত মূলত পদ্ম চাষ হয়। পদ্ম ফুলের চাহিদা দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্তই বেশি থাকে। কিন্তু অতি সম্প্রতি একটানা বৃষ্টিতে ভাতারের নতুনগ্রাম ও বড়বেলুন এলাকায় যাঁরা পদ্ম চাষ করেন, তাঁদের ক্ষতি হয়েছে। তার জন্য পুজোয় পদ্মের জোগানে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।’’ অমিত আরও বলেন, ‘‘এখনই পাইকারি বাজারে এক পিস পদ্মের দাম হয়ে গিয়েছে ১৫ টাকা। মহালয়ার পর থেকে দাম বেড়ে গিয়ে প্রতি পিস পদ্ম ২৫-৩০ টাকা পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। এমনটা হলে তখন জেলার খোলা বাজারেও পদ্মের দাম আরও খানিকটা চড়ে যাবে।’’