দোষীদের গ্রেফতাদের দাবিতে বিক্ষোভ ডিওয়াইএফ-এর। নিজস্ব চিত্র
কলেজে আয়োজিত রক্তদান শিবিরকে কেন্দ্র করে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হওয়ায় নিন্দায় সরব হয়েছেন সমাজকর্মী থেকে চিকিৎসক মহল। ভবিষ্যতে যাতে এমন পরিবেশ তৈরি না হয়, সেই আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, আয়োজকদেরও আরও বেশি সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। এ দিকে, রক্তদান শিবিরে হামলার ঘটনায় যুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে বুধবার কুলটি থানায় বিক্ষোভ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করল বাম ছাত্র-যুব সংগঠন। পাশাপাশি, যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকেও রক্তদান শিবিরে হামলার নিন্দা করে কুলটি থানায় লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার কলেজ চত্বরে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করেছিলেন পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেখানে বিরোধীরা কেন রক্ত দিতে এসেছেন, কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়কে, এমন প্রশ্ন তোলেন ‘কয়েক জন’। শুরু হয় অশান্তি, মারামারি। তা থামাতে গেলে, ‘হেনস্থা’-ও করা হয় কর্তৃপক্ষকে।— মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে এমনই অভিযোগ করেছেন কর্তৃপক্ষ। শিক্ষাকর্মী-সহ কলেজের অধ্যক্ষকে নিগ্রহ করা হয় বলেও অভিযোগ ওঠে। এ দিকে, এসএফআই-এর অভিযোগ, টিএমসিপি হামলা চালিয়েছে। অভিযোগ মানেনি টিএমসিপি।
তবে রক্তদানের মতো ভাল কাজে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় সরব হয়েছেন চিকিৎসক থেকে রক্তদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মীরা। যেমন আসানসোল ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান চিকিৎসক সঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, তিনি নিজে ওই দিন শিবিরে উপস্থিত ছিলেন। রক্তদানের অনুষ্ঠান শুরুর পূর্বে তিনি কলেজের পড়ুয়াদের রক্তদানে উৎসাহ দিতে সচেতনতার পাঠও নেন। সঞ্জিত বলেন, “আমি সাত বছর ধরে জেলা হাসপতালের ব্লাড ব্যাঙ্কের দায়িত্ব পালন করছি। এখনও পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি শিবির করেছি। রক্তদান শিবিরে এমন অশান্তির পরিবেশ আগে কখনও দেখিনি।” তাঁর সংযোজন: “এই ঘটনা সমাজের কাছে লজ্জার। এই অসচেতকদের জন্য রক্তদান আন্দোলনের লড়াই পন্ড হতে দেওয়া যায় না। লড়াই জারি রাখতে হবে।” ওয়েস্ট বেঙ্গল ভলান্টারি ব্লাড ডোনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন রাজ্য সহ-সম্পাদক দেবাশিস চক্রবর্তীর দাবি, ১৯৮৫ থেকে রক্তদানের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ করছেন। কিন্তু শিবির চলাকালীন রক্তদাতাদের উপরে আক্রমণের ঘটনা অতীতে কখনও শোনেননি। তিনি বলেন, “এমন অশান্তির পরিবেশ করলে সাধারণ মানুষ রক্তদান শিবিরে আসতে ভয় পাবেন।” দেবাশিস জানান, কুলটির ঘটনার প্রেক্ষিতে তাঁরা সচেতনতা প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এ দিকে, শিবিরে হামলা চালানো ও তাঁদের কর্মীদের মারধরে যুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে বাম ছাত্র-যুব সংগঠন কুলটি নিউরোড থেকে মিছিল করে থানায় পৌঁছয়। ঘণ্টা দু’য়েক অবস্থান-বিক্ষোভ করা হয়। ডিওআইএফ-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বলেন, “হামলা চালিয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। ওদের গ্রেফতার না করলে রাজ্য জুড়ে আন্দোলন শুরু হবে।” পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলে অবস্থান তোলা হয়। হামলার ঘটনার নিন্দা করে যুব তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি বিমান দত্ত অভিযোগ করেন, “এসএফআই এই হামলা চালিয়েছে।” তিনি বলেন, “আমরাও কুলটি থানায় অভিযোগ দায়ের করেছি।”