মাঠেই শুকিয়ে গিয়েছে আনাজ। পূর্বস্থলীর বিশ্বরম্ভায়। নিজস্ব চিত্র javedarafin mondal
প্রায় ১২ বছর আগে কালনার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির কমপ্লেক্সে একটি আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হয়। কয়েক বছর আগে মুখ্যমন্ত্রী এসে সেটির উদ্বোধনও করে যান। কিন্তু আজও বন্ধ পড়ে সেই কেন্দ্র। আগাছায় ঢেকেছে আশপাশ। সামনে পড়ে রয়েছে বালি পাথর। অযত্নে নষ্ট হতে বসেছে বেশির ভাগ যন্ত্রাংশ। এলাকাবাসীর দাবি, কাছাকাছি ট্রান্সফর্মার বসিয়ে কেন্দ্রের শীতলীকরণ যন্ত্র পরীক্ষাও হয়েছিল। তবে আনাজ রাখার ব্যবস্থা চালু হয়নি।
কালনা মহকুমার মধ্যে সব থেকে বেশি আনাজ চাষ হয় পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে। এলাকার চাহিদা মিটিয়ে মহকুমার পাইকারি বাজারগুলি থেকে ট্রাক ভর্তি আনাজ যায় রাজ্যের বিভিন্ন বাজারে। এমনকি ভিন্ রাজ্যের ফড়েরাও এসে এখান থেকে আনাজ কিনে নিয়ে যান। চাষিরা জানান, জমির ফসল তুলে তাঁরা কাছাকাছি পাইকারি বাজারে নিয়ে যান। সেখানে আড়তদারেরা তাঁদের ফসল বিক্রি করেন। বিনিময়ে তাঁরা কমিশন পান। আনাজ চাষি সনাতন ঘোষের কথায়, “পাইকারি বাজারগুলির আশপাশে আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। যাতে পাইকারি বাজারে এসে চাষিরা দাম না পেলে ওই সংরক্ষণ কেন্দ্রে কিছু দিন আনাজ রাখতে পারেন।”
চাষিদের দাবি, আবহাওয়া ভাল থাকলে, আনাজের উৎপাদন ভাল হয়। তখন জলের দরে বিক্রি করতে হয় সেগুলি। পূর্বস্থলী ২ ব্লকের আনাজ চাষি ফরজ শেখ বলেন, “বহু বার হয়েছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টোম্যাটোর মতো ফসলের দাম এতটা কমে গিয়েছে, যে সেগুলি জমি থেকে তুলে এনে পাইকারি বাজার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার খরচও ওঠে না। বাধ্য হয়ে জমির ফসল গরু, ছাগলকে খাইয়ে সে জমিতে অন্য ফসলের চাষ করতে হয়।” আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে আনাজের গাছ নষ্ট হয়ে গেলে উৎপাদন তলানিতে নেমে যায়। আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র থাকলে যখন কম দাম থাকবে তখন অনায়াসে সেখানে রেখে দেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে উৎপাদন কমে গেলেও বাজারে ভারসাম্য বজায় থাকবে।
কৃষি বিপণন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বাজার লাগোয়া আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়। যার মধ্যে একটি হয় কালনা ২ ব্লকে জিউধারা এলাকায় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমতির কমপ্লেক্সে। এর জন্য আরআইডিএফ প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয় ৯৭ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫৭৮ টাকা। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরির কাজ শেষও হয়ে যায়। উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে তার তালা এখনও খুলে দেওয়া হয়নি চাষিদের জন্য।
মহকুমাশাসক (কালনা) শুভম আগরওয়াল জানান, ওই কেন্দ্রটি কী অবস্থায় রয়েছে তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেন সেটি চালু হয়নি সে ব্যাপারেও জানা হবে। তিনি বলেন, “অন্য পাইকারি বাজারগুলিতে আনাজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়া যায় কি না সে ব্যাপারেও ভাবা হবে।”