কাটোয়ায় বেহাল জল নিকাশি পরিস্থিতি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়।
সময়ের সঙ্গে জনবসতির চাপ বাড়ছে প্রাচীন শহর কাটোয়া ও দাঁইহাটে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে নিচু জায়গা ও জলাশয় বোজানোর প্রবণতা বেড়েছে বলে অভিযোগ ওঠে বার বার। আটকানো যায়নি প্লাস্টিকের ব্যবহার। রাস্তার পাশে বড় নর্দমাগুলির উপরে ভারী স্ল্যাব পেতে রাখায় ঠিকমতো সাফাই হয় না নিয়মিত। এ সবের ফলে, নিকাশি ব্যবস্থা ক্রমশ বেহাল হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ দুই শহরেই।
কাটোয়া শহরের এক পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে ভাগীরথী, অন্য পাশে অজয়। দুই নদ-নদীর মাঝে অনেকটা গামলার আকারে রয়েছে কাটোয়া শহর। শহরের অনেকটা এলাকা
নিচু হওয়ায়, নিকাশি নিয়ে সমস্যা রয়েছে বরাবর। শহরের বড় অংশের ব্যবহৃত জল ভাগীরথী ও অজয়ে গিয়ে পড়ে। বাকি অংশের জল নানা জলাশয়ে গিয়ে পড়ত। কিন্তু বিভিন্ন জলাশয় ও নিচু জায়গা ভরাট করে বাড়ি তৈরি হওয়ায় সেই জল নিকাশির সুযোগ কমেছে বলে অভিযোগ শহরবাসীর একাংশের। শহরের কিছু অংশের জল কাঁচা নর্দমা দিয়ে এসটিকেকে রোড ধরে নতুনগ্রামের পাশ দিয়ে নদীতে গিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে ওই নর্দমাও মজে যাওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।
শহরের প্রধান রাস্তাগুলিতে ব্যবসায়ীরা নর্দমার উপরে স্ল্যাব
পেতে রেখে ব্যবসা করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, তার জেরে নিয়মিত নর্দমাগুলি পরিষ্কার হয় না। ফলে, সামান্য বৃষ্টিতেই সেখান থেকে জল উপচে রাস্তা ভাসিয়ে দেয়। টানা কিছু সময় ভারী বৃষ্টি হলেই শহরের মাধবীতলা, কারবালাতলা, সাহেববাগান, স্টেশনবাজার, কাছারি রোড, টেলিফোন ময়দান, সার্কাস ময়দান, লেনিন সরণি-সহ নানা এলাকায় প্রধান রাস্তাগুলির একাংশে জল জমে যায়। আবার, পঞ্চবটীপাড়া, স্টেডিয়ামপাড়া, ন্যাশনালপাড়া, ফরিদপুর কলোনি, পাবনা কলোনি, ঘোষহাটের রাস্তায় জলে ভাসে বৃষ্টিতে।
কাটোয়ার ফরিদপুর কলোনির বাসিন্দা অর্জুন সরকারের অভিযোগ, ‘‘আমাদের পাড়ায় বৃষ্টি থেমে গেলেও জল নামতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। নর্দমার নোংরা জল বাড়িতে ঢুকে পড়ছে।’’ একই দাবি স্টেডিয়াম পাড়ার বাসিন্দা সুব্রত দত্তেরও। পুরসভা-প্রশাসনের তরফে একাধিক বার প্লাস্টিকে নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়েছে। কিন্তু বাজার-দোকানে এখনও প্লাস্টিক ব্যবহার নজরে পড়ে আগের মতোই। নর্দমায় বিপুল পরিমাণে এই প্লাস্টিক আটকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে বলে অনেক নাগরিকের অভিযোগ।
দাঁইহাট শহরেও নিকাশি নিয়ে বাসিন্দাদের নাজেহাল অবস্থা। শহরের হনুমানলাঠিতলা, পাতাইচণ্ডীতলা, আমদানি রোড, শবশিবতলা, চামপচা রোড-সহ নানা এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই নর্দমার জল উপচে রাস্তা দিয়ে বইতে থাকে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। শহরের আমদানি রোডের বাসিন্দা ননীগোপাল ভক্তের কথায়, ‘‘গোটা দাঁইহাট শহরেই নিকাশি ব্যবস্থা অত্যন্ত বেহাল। এমনিতেই নালাগুলিতে জল জমে দুর্গন্ধ ছড়ায়। সামান্য বৃষ্টিতে দূষিত জল বাড়িতে ঢুকে যাচ্ছে।’’
দাঁইহাটের পুরপ্রধান প্রদীপ রায় বলেন, ‘‘নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত করার জন্য শহর জুড়ে সমীক্ষার কাজ চলছে। সামগ্রিক চিত্র হাতে পেলে মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে হাল ফেরানো হবে।’’ কাটোয়ার পুরপ্রধান সমীর সাহা বলেন, ‘‘দু’ধারে নদী থাকায় আমাদের শহর এমনিতেই নিচু। ফলে, বরাবরই সমস্যা রয়েছে। তবে শহরের রাস্তা ও নর্দমাগুলি অনেকটা উঁচু করা হয়েছে। নতুন করে নর্দমা তৈরি করা হয়েছে। কোথাও জল জমলে দ্রুত পাম্পের সাহায্যে বার করা হয়।’’