জামালপুরে দামোদরে পুণ্যস্নান। নিজস্ব চিত্র।
এক ঝলক দেখলে মনে হবে এ যেন আর এক গঙ্গাসাগর। শুক্রবার হাজার হাজার আদিবাসী পুণ্যার্থী স্নান সেরে পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করলেন পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে দামোদরের তেলকুপি গয়া ঘাটে। তর্পণ সেরে পুজো দিলেন সামনের মারাংবুরু মন্দিরে।
ফিবছর মাঘের শুরুতে জামালপুরের তেলকুপি গয়া ঘাটে পুণ্যস্নান ও তর্পণে অংশ নেন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা আদিবাসী পুণ্যর্থীরা। শুধু এই রাজ্যের আদিবাসীরাই নয় ঝাড়খণ্ড বিহার ওড়িশা থেকেও কয়েক হাজার পুণ্যার্থী যোগ দেন এই পুণ্যস্নানে।
পুণ্যস্নানের অনুষ্ঠানে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে কড়া পুলিশি বন্দোবস্ত ছিল জামালপুরে। দামোদরে বিশেষ নজরদারির ব্যবস্থাও রাখা হয়। কাছেই মেডিক্যাল ক্যাম্প তৈরি করা হয়। অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তারা ছিলেন। এ ছাড়া পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদের সহসভাধিপতি দেবু টুডু, জামালপুর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মেহমুদ খান, বিডিও শুভঙ্কর মজুমদার এ দিন তেলকুপি ঘাটে আয়োজিত বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। দেবু টুডু নিজে দামোদরে তর্পণ সারেন।
তর্পণ উৎসব আয়োজকদের তরফে রবীন মাণ্ডি জানান, বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজনের কাছে গঙ্গাই সব থেকে পবিত্র জলাশয়। কিন্তু সুপ্রাচীন কাল থেকে দামোদরকেই সবথেকে পবিত্র জলাশয় হিসাবে মানেন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা। দামোদরের তেলকুপি গয়া ঘাট এই দেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ পূণ্য তীর্থভূমি। বর্ণ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন মহালয়ার দিন গঙ্গায় পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ সারেন। পৌষের সংক্রান্তিতেও গঙ্গাস্নান সারেন বর্ণ হিন্দুরা। তবে আদিবাসীরা প্রতি বছর পয়লা মাঘ দামোদরের তেলকুপি গয়া ঘাটে পুণ্য স্নান সেরে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ সারেন। তর্পণ সেরে আদিবাসীরা তাদের আরাধ্য দেবতা মারাংবুরুর মন্দিরে পুজো দেন।
আদিবাসী সমাজের বিশিষ্ট কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরাও এ দিন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। ধর্মীয় রীতি সেরে আদিবাসী মহিলারা পুরুষদের সঙ্গে দামোদরে চরে নাচ গানে অংশ নেন। বালির চরেই রান্না করে সপরিবারে খাওয়া দাওয়া সারেন। জমজমাট মেলাও বসে সেখানে।