ফাইল চিত্র।
সহনশীল মাত্রার চেয়ে বেশি আর্সেনিক রয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলার পাঁচটি ব্লকের ভূর্গভস্থ জলে। এই সব জায়গায় সারা বছরই এই মাত্রায় আর্সেনিক থাকে, না কি জলস্তর কম-বেশি হওয়ার সঙ্গে তার রেখচিত্র পাল্টায়, তা পরীক্ষা করতে উদ্যোগী হয়েছে জেলা প্রশাসন। ওই পাঁচটি ব্লকের ১৫টি নলকূপকে ‘আর্সেনিক ট্রেন্ড স্টেশন’ করছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর (পিএইচই)। বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিদিন ভূগর্ভস্থ জলের স্তর পরীক্ষা করে আর্সেনিক নিয়ে তুলনামূলক গবেষণা হবে। তার রিপোর্টের ভিত্তিতে নদীর জল বা ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহারে জোর দেওয়া হবে বলে পিএইচই সূত্রে জানা গিয়েছে।
ওই দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সোমনাথ কুণ্ডু বলেন, “এলাকা বা ব্লকে আর্সেনিকের মাত্রা জানার জন্যই একদম নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। জলস্তরের সঙ্গে আর্সেনিকের সহনশীল মাত্রার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে প্রতিদিন। লম্বা সময় ধরে নজরদারি করার পরে আমরা ওই এলাকার জল ব্যবহার করা কতটা উপযুক্ত তা বুঝতে পারব। সেই মতো রিপোর্ট তৈরি করে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে।’’
পিএইচই সূত্রে জানা যায়, কালনা ২ ব্লকের সাতগাছিয়া পঞ্চায়েতের শতপথি, পূর্ব সাহাপুর ও বন্দেবাজ গ্রামে, পূর্বস্থলী ১ ব্লকের দোগাছিয়া পঞ্চায়েতের সোনারুদ্র ও জাহাননগর পঞ্চায়েতের মঙ্গনপুর, নসরতপুরের হাটসিমলা, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কালেখাঁতলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতের শিলপাড়া, বাগছাড়া ও ঝাউডাঙায়, কাটোয়া ১ ব্লকের খাজুরডিহির মণ্ডলহাট, সরগ্রামের চন্দ্রপুর ও গোয়াইয়ে, কাটোয়া ২ ব্লকের অগ্রদ্বীপের কালিকাপুর, গাজিপুরের রামদাসপুর ও সিঙ্গিতে ‘আর্সেনিক ট্রেন্ড স্টেশন’ করা হচ্ছে।
জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘‘প্রতিটি নলকূপের ভিতর দিয়ে বিশেষ যন্ত্র জলের স্তর পর্যন্ত বসানো থাকবে। নলকূপের বাইরে একটি যন্ত্রে রেখচিত্রের মতো করে জলের স্তরের ওঠানামা বোঝা যাবে।’’ জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের দাবি, এই জেলায় পূর্বস্থলীর দু’টি ব্লকে আর্সেনিকের প্রকোপ রয়েছে অন্তত দু’দশক ধরে। আশপাশে কাটোয়া ১ ও ২ এবং কালনা ২ ব্লকের বেশ কিছু নলকূপের জল পরীক্ষা করেও আর্সেনিকের বিপজ্জনক উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। ‘জেলা আর্সেনিক প্রতিরোধ ও প্রতিবিধান কমিটি’র মতে, আর্সেনিক-প্রবণ এলাকায় ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহারে জোর দেওয়া দরকার। সরকারের কাছেও ভূপৃষ্ঠের জল শোধন করে বাড়ি-বাড়ি সরবরাহের দাবি জানানো হয়। সে দাবি মেনে বেশ কয়েকবছর আগে পূর্বস্থলীর কমলনগরে ভাগীরথীর জল শোধন করে পাইপলাইনে গ্রামে-গ্রামে সরবরাহ করছে পিএইচই।
ওই কমিটির জেলা সভাপতি দেবাশিস নাগ বলেন, ‘‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশ মেনে জলে আর্সেনিকের সহনশীল মাত্রা রাখতে হবে। তবেই ‘আর্সেনিক ট্রেন্ড স্টেশন’ করে সাফল্য মিলতে পারে। ভূপৃষ্ঠের জল ব্যবহার করার উপরে আমাদের যে দাবি, তার একটি ধাপ শুরু হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের পক্ষে ভাল ইঙ্গিত।’’