ধর্মঘট: আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: পাপন চৌধুরী
শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে বুধবার জেলায় মিশ্র প্রভাব পড়েছে বলেই মত নানা এলাকার বাসিন্দাদের। গণ-পরিবহণ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে বলে জানা গিয়েছে। তবে বাজারহাট, স্কুল-কলেজে মিশ্র প্রভাব পড়ে বলেই সংশ্লিষ্ট পক্ষের দাবি। সরকারি অফিসগুলিতেও হাজিরা ছিল প্রায় স্বাভাবিক।
পরিবহণ: সকালে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে তৃণমূল প্রভাবিত আসানসোল মোটর ট্র্যান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন বাস চালানোর জন্য বলেন, দাবি পরিবহণ কর্মীদের। কিছুক্ষণের জন্য শুরু হয় বরাকর, বার্নপুর, জামুড়িয়া, চিত্তরঞ্জন রুটে মিনিবাস চলাচল। তবে আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, ‘‘পরিবহণ কর্মীরা বাস নামালেও যাত্রী খুবই কম থাকায় বেলার দিকে বাস চলাচল কমে যায়। চিত্তরঞ্জন রুটে বাস প্রায় চলেইনি।’’
পাশাপাশি, দুর্গাপুরের সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে বেসরকারি দূরপাল্লার বড় বাস চলেনি। স্টেশন লাগোয়া বাসস্ট্যান্ড থেকে সকালে দু’-একটি বাস ছাড়ে। সেখানে ধর্মঘটের সমর্থকেরা সরকারি বাস অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালে বন্ধ হয় বেসরকারি বাস চলাচলও। দু’-একটি সরকারি বাস চলাচল করেছে। স্টেশন এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনে সিটু ও আইএনটিইউসি যৌথ মিছিল করে। নেতৃত্বে ছিলেন আইএনটিইউসি প্রভাবিত বড় বাস কর্মী সংগঠনের নেতা স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘ধর্মঘট ডাকার কারণগুলি নিয়ে সাধারণ মানুষ সহমত। তাই ধর্মঘট সফল।’’
পুরসভা মোড়, ডিভিসি মোড়, এসবিএসটিসি গ্যারাজ প্রভৃতি জায়গায় মিনিবাস আটকানো হওয়ায় ‘চেষ্টা করা হলেও’ চাকা গড়ায়নি মিনিবাসের। মিনিবাস মালিকদের অন্যতম সংগঠন ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ারস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক কাজল দে বলেন, ‘‘যাত্রী কম থাকায় যতগুলি মিনিবাস না চালালেই নয়, ততগুলিই চালানো হয়েছে।’’ পাশাপাশি, জামুড়িয়া, রানিগঞ্জ, অণ্ডাল, পাণ্ডবেশ্বরেও বাস চলাচল প্রায় পুরো বন্ধ ছিল।
এই পরিস্থিতিতে ভোগান্তির মুখে পড়েন যাত্রীরা। সাবিনা খাতুন, কমলিকা রায় নামে দুই যাত্রী বলেন, ‘‘বেশি টাকা দিয়ে টোটো ভাড়া করে বিধাননগর যেতে হয়েছে।’’ ট্রেনে এসে স্টেশনে নেমে বাসস্ট্যান্ড থেকে মিনিবাস না পেয়ে দেড়শো টাকায় অটো রিজার্ভ করে বাড়ি ফিরতে হয় বলে জানান ডিএসপি টাউনশিপের বি-জোনের বাসিন্দা সৌরভ মণ্ডল।
পাশাপাশি, সিটুর মিছিল দুর্গাপুরের রায়ডাঙার কাছে রেললাইনে উঠে পড়ে। রেল পুলিশ আধ ঘণ্টা পরে তাঁদের সরিয়ে দেয়। সেই সময়ে ট্রেন না আসায় সমস্যা হয়নি। সিটু নেতা পঙ্কজ রায় সরকারের নেতৃত্বে হওয়া অবরোধের জেরে স্টেশনে বর্ধমানগামী একটি লোকাল ট্রেন আটকে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে রেল পুলিশের সঙ্গে বচসা হয় অবরোধকারীদের। মিনিট দশেক পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
বাজার-দোকান: এ দিন আসানসোলের মূল বাজার, সিটি বাস স্ট্যান্ডের উল্টো দিকের সুপার মার্কেট, হাটনরোড বাজার, রানিগঞ্জ বাজার বন্ধ ছিল। তবে বার্নপুর, কুলটি, বরাকর, রূপনারায়ণপুর এবং আসানসোলের আশপাশের নানা বাজার, দুর্গাপুর মেনগেট, মায়াবাজার, বেনাচিতি, চণ্ডীদাস বাজার, সিটি সেন্টারের বাজার, শপিং মল খোলা ছিল। দুর্গাপুর বাজারে আংশিক দোকানপাট বন্ধ ছিল। বেনাচিতি ও চণ্ডীদাস বাজারে ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিল করে বামেরা। দোকানপাট খোলা ছিল কাঁকসাতেও।
স্কুল-কলেজ: দুর্গাপুরের সরকারি ও বেসরকারি, সব স্কুলই খোলা ছিল। তবে পড়ুয়াদের উপস্থিতি ছিল অন্য দিনের তুলনায় কিছু কম।
শিল্পক্ষেত্র: দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের (ডিএসপি) মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক বেদবন্ধু রায় জানান, ৯০ শতাংশের উপরে হাজিরা ছিল। উৎপাদনও স্বাভাবিক। তবে কনিষ্ক মোড়ে ধর্মঘট সমর্থনকারীদের বিরুদ্ধে যানবাহন আটকানোর অভিযোগ ওঠে। তাতে কয়েক জন ডিএসপি কর্মী কারখানায় যেতে বাধা পান বলে অভিযোগ। সেখানে তৃণমূল ও আইএনটিটিইউসি কর্মীরা এসে তাঁদের সরিয়ে দেন। আসে পুলিশও। ডিপিএল-এও হাজিরা ছিল স্বাভাবিক, দাবি আধিকারিকদের। সিটু সেখানের গেটে অবরোধ-বিক্ষোভ করে। পাশাপাশি, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল, মুগমা ও পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জের বাঁশড়া ছাড়া সংস্থার সব খনিতেই কয়লা উত্তোলন স্বাভাবিক ছিল বলে দাবি ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের। তিনি জানান, সামগ্রিক ভাবে ৯২ শতাংশ হাজিরা ছিল। তবে মঙ্গলপুর শিল্পতালুকে মোটে দু’টি স্পঞ্জ আয়রন কারখানায় স্বাভাবিক কাজ হয়েছে এ দিন। জামুড়িয়া শিল্পতালুকে সামান্য প্রভাব পড়ে।
সিটুর জেলা সম্পাদক বংশগোপালবাবু বলেন, ‘‘ধর্মঘট মানুষ সমর্থন করেছেন। বাজার, পরিবহণ ক্ষেত্র পুরো বন্ধ ছিল। কারখানা তেমন প্রভাব না পড়লেও খনির উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।’’ ধর্মঘট সফল বলে দাবি করেন আইএনটিইউসি নেতা চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, ‘‘ধর্মঘট একেবারেই ব্যর্থ।’’ একই দাবি করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইও। এ দিন এসইউসি ও এআইইউটিইউসি ধর্মঘটের সমর্থনে দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে মহকুমাশাসকের দফতরের সামনে এবং এসবিএসটিসি দফতরের সামনে সভা করে।