শশীভূষণ তিওয়ারি।
ছেলের মোটরবাইকের পিছনে বসে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল আসানসোলের ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগের ওসি-র। সোমবার সকালে দুর্গাপুরের ডিভিসি মোড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে তিনি মোটরবাইক থেকে পড়ে গেলে পিছন থেকে আসা একটি ট্রাক চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় শশীভূষণ তিওয়ারির (৪৭)। আহত হন তাঁর ছেলে। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক মোদী বলেন, ‘‘ট্রাকটির খোঁজে তল্লাশি চলছে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শশীভূষণবাবু আসানসোল দক্ষিণ থানার ওসি (ট্র্যাফিক) পদে কর্মরত ছিলেন। বাড়ি বিহারের আড়া জেলায়। থাকতেন দুর্গাপুরের বিধাননগরে সিআইএফ ব্যারাকের আবাসনে। এ দিন সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ সেই আবাসন থেকেই ডিভিসি মোড়ে যাচ্ছিলেন। সেখান থেকে বাসে চড়ে আসানসোলে কর্মস্থলে যাওয়ার কথা ছিল শশীভূষণবাবুর। মোটরবাইক চালাচ্ছিলেন তাঁর বছর একুশের ছেলে অবিনাশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিভিসি মোড়ের কিছুটা আগে একটি খাটালের কাছে কোনও ভাবে মোটরবাইক থেকে ডান দিকে রাস্তার উপরে পড়ে যান শশীভূষণবাবু। তখনই পিছন থেকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে আসা একটি ট্রাক তাঁর মাথার উপর দিয়ে চলে যায়। অবিনাশ পড়ে গিয়েছিলেন বাঁ দিকে। তিনি সামান্য চোট পান। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
দুর্ঘটনাস্থল: শশীভূষণবাবুর (ইনসেটে) মৃত্যু হয় এখানেই। নিজস্ব চিত্র
দুর্ঘটনা নিয়ে অবিনাশ কোনও কথা বলতে চাননি। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ মনে করছে, খাটালের কাছে তিনি কোনও কারণে জোরে ব্রেক কষেন। তাতে মোটরবাইক নিয়ন্ত্রণ হারায়। পিছনে বসে থাকা শশীভূষণবাবু ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। অবিনাশবাবু বাঁ দিকে পড়ায় বেঁচে যান। কমিশনারেটের ট্র্যাফিক বিভাগের এসিপি (সেন্ট্রাল) প্রশান্ত দাস বলেন, ‘‘শশীভূষণবাবু আগে দুর্গাপুরে র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সে (র্যাফ) কর্মরত ছিলেন। বছরখানেক আগে ট্র্যাফিকের ওসি হন। মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে গেল।’’
২ নম্বর জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনার বিরাম নেই। গত দু’মাসে একের পর এক ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন অনেকে। মাসখানেক আগে পানাগড় বাইপাসে ট্র্যাফিক সামলানোর সময়ে ট্রাকের ধাক্কায় নারায়ণ রায় (২৭) নামে এক পুলিশকর্মীরও মৃত্যু হয়। যাত্রীদের অনেকের অভিযোগ, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ ঢিমেতালে চলায় সমস্যা হচ্ছে। বেপরোয়া ভাবে যান চলাচলও বেড়েছে বলে অভিযোগ। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের এক আধিকারিক অবশ্য দাবি করেন, রাস্তার নির্মাণকাজ নির্দিষ্ট গতিতেই চলছে। তবে রাস্তার পাশে গ্যাসের পাইপলাইন ও সামান্য কিছু জমির সমস্যায় নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলে জানান তিনি। এসিপি ট্র্যাফিক (সেন্ট্রাল) প্রশান্তবাবু বলেন, ‘‘দুর্ঘটনা রুখতে সম্প্রতি পুলিশ-প্রশাসন এবং এনএইচআই-এর বৈঠক হয়েছে। ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’