—ফাইল চিত্র
রুটে বাস চলছে না। অথবা চললেও অত্যন্ত কম। কোথাও বা সন্ধ্যার পরে দেখা মিলছে না মিনিবাসের। এই পরিস্থিতিতে পথে নেমে আসানসোল-সহ জেলার নানা প্রান্তের বাসিন্দাদের যাতায়াতের ভরসা, অটো, টোটো। কিন্তু তাতেও বিস্তর সমস্যা হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।
সেন-র্যালে এলাকার বাসিন্দা শুভম মাজি বলেন, ‘‘সিট ভর্তি না হলে অটো ছাড়ে না। সঙ্গে ব্যাগপত্র থাকলে বলা হয়, রিজার্ভ করুন। দশ টাকায় যে দূরত্ব যাওয়া যায়, রিজার্ভে যেতে গেলে সেথানে খরচ একশো টাকা। সবার পক্ষে এই টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’’ তা ছাড়া ‘সুযোগ বুঝে’ বেশি ভাড়াও চাইছেন অটো, টোটো চালকেরা, অভিযোগ যাত্রীদের একাংশের। সেই ভাড়া না দিতে চাইলে প্রায়ইবচসাও বাধছে।
মহিশীলার বাসিন্দা বাসুদেব সাহার দাবি, ‘‘আগে মহিশীলা থেকে আসানসোল স্টেশন ভায়া হাসপাতাল-আসানসোল আদালত বাস চলত। কিন্তু এখন চলে না। সন্ধ্যার পরে চড়া দরে অটো রিজার্ভ করতে হয়।’’ সন্ধ্যার পরে, বিশেষত শীত ও বর্ষায় পথে অটোও খুবই কম মেলে বলে জানান গোপালপুরের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সূত্রধর। যদিও অটো চালকেরা যাত্রীদের এ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বাস বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের পাশাপাশি, পরিবহণ কর্মীরাও সমস্যায় পড়ছেন। পরিবহণ কর্মী মহেশ প্রসাদের দাবি, ‘‘মিনিবাসে আর তেমন আয় নেই। আমাদের রোজগার অত্যন্ত কম। মালিকদেরও ক্ষতি হচ্ছে।’’ আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, একটি মিনিবাসে চালক, কন্ডাক্টর ও খালাসি থাকেন। দিনে এই তিন জনের মোট বেতন ২৭২ টাকা। এ ছাড়া, প্রত্যেককে দু’বেলা জলখাবার বাবদ ২৫ টাকা এবং দুপুরের খাবার বাবদ দিতে হয় ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ফলে, এই পরিস্থিতিতে সব দিক বজায় রেখে মিনিবাস চালাতে সামগ্রিক ভাবে সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি বাস মালিকদের একাংশের।
কিন্তু মিনিবাস চলাচলের এই হাল কেন? মহেশবাবুর অভিযোগ, ‘‘বাস রুটে অটো, টোটো ছুটছে। ফলে, ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’ ‘আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোশিয়েসন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায়ও বলেন, ‘‘অটো, টোটো, ট্রেকারের দৌরাত্ম্যে অনেকে মিনিবাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছেন।’’
যদিও ইতিমধ্যেই গণ-পরিবহণ ব্যবস্থাকে ‘স্বাভাবিক’ অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘অটোর বৈধ অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে। মহকুমায় টোটো-র যাতায়াত বন্ধ করে ই-রিকশার অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।’’ জেলা পরিবহণ আধিকারিক পুলকরঞ্জন দাসমুন্সি জানান, অনুমোদনপ্রাপ্ত অটোগুলি কোনও ভাবেই বাস রুটে চলবে না। অটো চালক সংগঠনের নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার আশ্বাস, ‘‘বাস রুটে অটো চলাচল করবে না। অটো চালকদের জন্য বাস রুট বাদ দিয়ে গোটা মহকুমায় ৮৭টি রুট ঠিক করা হয়েছে। একমাত্র আসানসোল পরিবহণ দফতর থেকে রেজিস্ট্রেশন করা অটোই মহকুমায় চলবে। রেজিস্ট্রেশনের কাজ শুরু হয়েছে। শহরে টোটো চলাচল নিষিদ্ধ। ই-রিকশা অনুমোদন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রায় এক হাজারটি রুট তৈরি হচ্ছে ই-রিকশার জন্য।’’