যুব কংগ্রেসের কর্মসূচি। নিজস্ব চিত্র
পাশাপাশি আনাজের দু’টি স্টল। একটির মাথায় লেখা, ‘মোদিজির আচ্ছে দিন কা দুকান’। অন্যটির মাথায় লেখা, ‘রাহুলজির মহব্বত কি দুকান’। যুব কংগ্রেসের ব্যবস্থাপনায় হওয়া দু’টি স্টলেই থরে-থরে সাজানো নানা ধরনের আনাজ। কিন্তু দামে বহু ফারাক। কম দামে জিনিস পেয়ে রাহুলের নামাঙ্কিত দোকান থেকে জিনিসপত্রও কিনলেন অনেকেই। ফাঁকা রইল মোদীর দোকান।— দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রবিবার দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপে এমনই অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচি করল যুব কংগ্রেস।
এ-জ়োনের আশিস মার্কেটে দু’টি স্টল তৈরি করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘আচ্ছে দিন’ এবং কর্নাটক জয়ের পরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর ‘মহব্বত কি দুকান’, এই স্লোগানকে বেছে নিয়ে দোকান দু’টির নাম দেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মোদীর নামাঙ্কিত দোকানে গোলাপি রঙের জামা ও কালো কোট পড়ে বসে আছেন এক জন। সামনে রাখা টোম্যাটো, কাঁচালঙ্কা, রসুন, আদা প্রভৃতি। চলতি বাজারদরে সেগুলি বিক্রি করা হচ্ছে। যেমন, ১৫০ টাকা কেজি দরে টোম্যাটো, ২০০ টাকা কেজি কাঁচালঙ্কা, রসুন, ৩০০ টাকা কেজি আদা। পাশেই রাহুলের নামাঙ্কিত দোকানে টোম্যাটো ৪০ টাকা, রসুন ও কাঁচালঙ্কা ১০০ টাকা এবং আদা ৭০টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। সেখানে জিনিসপত্র বিক্রি করছেন এক জন স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এবং এক জন টি-শার্ট পরা যুবক।
কম দামে নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস পেয়ে রাহুলের নামাঙ্কিত দোকানে ভিড়ও উপচে পড়ল। ফাঁকা রইল মোদীর নামাঙ্কিত দোকান। রাহুলের নামাঙ্কিত দোকানে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ক্রেতা বললেন, “এখান থেকে আদা, রসুন ও কাঁচালঙ্কা কিনলাম। বাজার অগ্নিমূল্য।” থলি ভরে জিনিসপত্র কিনে ফেরার পথে স্থানীয় বাসিন্দা সুমনা গুহ বলেন, “এক দিনের এই প্রতীকী প্রতিবাদে যে দর বেঁধে দেওয়া হয়েছে, তা-ই যেন বছরভর থাকে। সরকারকে এটা ভাবতে হবে।” আবার জিনিসপত্র কিনতে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন পেনশেনভোগী সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “শুনলাম এখানে সব সস্তায় দেওয়া হচ্ছে। তাই কিনতে এসেছি। বাজারে জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে চরম বিপাকে পড়েছি। কংগ্রেসের এই প্রতিবাদ যথাযথ।” তবে ক্রেতারা কেউই বড় একটা রাজনীতির কথা বলতে চাননি।
তবে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তী বলেন, “বাজারে আনাজের দাম ঊর্ধ্বমুখী। সরকারের হুঁশ নেই। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরতেই এই আয়োজন।” একই কথা বলেন যুব কংগ্রেস নেতা রানা অধিকারীও। যদিও, বিষয়টিকে আমল দেয়নি বিজেপি। দলের জেলা সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আদা, রসুন, কাঁচালঙ্কার দাম নিয়ন্ত্রণ করার কথা রাজ্য সরকারের। আসলে, সামনে লোকসভা ভোট। তৈরি হচ্ছে অনৈতিক জোট। তাই লক্ষ্য বিজেপি। এতে লাভ হবে না।” এ দিকে, তৃণমূলের জেলা সহ-সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় বলেন, “আনাজের দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্সের অভিযান, ‘সুফল বাংলা’ স্টল খোলার মতো নানা পদক্ষেপ করে রাজ্য সরকার। বিজেপির কথার কোনও গুরুত্ব নেই।” দেবেশ জানান, সরকার বলতে রাজ্য ও কেন্দ্র, দুই সরকারের কথাই বলেছেন তাঁরা।