জ্বালা জুড়োতে ভরসা ডাব-গ্লুকোজ

দরজায় ভোট। বাড়ছে প্রচারের ঝাঁঝ। সেই সঙ্গে বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। এই পরিস্থিতিতে কোনও প্রার্থীকে প্রচারে লাগাম টানতে দেখা যাচ্ছে, কেউ বা আবার ডাব-জলেই সংগ্রহ করছেন মিটিং, মিছিলে গলা চড়াবার রসদ। চড়া রোদ্দুরে ঝাঁপ ফেলছেন দোকানিরাও।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৪৮
Share:

মেমারিতে ঠান্ডা জলের বোতলেই স্বস্তি তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজার।

দরজায় ভোট। বাড়ছে প্রচারের ঝাঁঝ। সেই সঙ্গে বর্ধমান-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে তাপপ্রবাহ। এই পরিস্থিতিতে কোনও প্রার্থীকে প্রচারে লাগাম টানতে দেখা যাচ্ছে, কেউ বা আবার ডাব-জলেই সংগ্রহ করছেন মিটিং, মিছিলে গলা চড়াবার রসদ। চড়া রোদ্দুরে ঝাঁপ ফেলছেন দোকানিরাও।

Advertisement

বেলা ১০টা। কালনা মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তা ততক্ষণে খাঁখাঁ করছে। তবে জনতার দরবারে পৌঁছনোর তাগিদে গরমের সঙ্গে জুঝতে দেখা গেল প্রার্থীদেরও।

এ বার বেশ খানিকটা দেরি করেই পূর্বস্থলী দক্ষিণ কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এলাকার সবকটি পঞ্চায়েতে পৌঁছতে তাই দিনভর ছুটে বেড়াচ্ছেন কংগ্রেস প্রার্থী অভিজিৎ ভট্টাচার্য। তবে দুপুর একটা থেকে সাড়ে ৩টে পর্যন্ত খানিকটা বিশ্রাম না নিলে শরীর আর সাই দিচ্ছে না বলে জানান অভিজিৎবাবু। রোদে দীর্ঘ পথ উজিয়ে যেতে সঙ্গে থাকছে লেব-জল, ওআরএস, সরবত আর গ্লুকোজ। প্রচারের জন্য তৈরি সমন্বয় কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, প্রার্থী ও অন্যান্য নেতা-কর্মীদের খাবারের তালিকাও বেশ সহজপাচ্য। থাকছে ভাত, ডাল, সবজি আর মাছ।

Advertisement

অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করেছেন পূর্বস্থলী উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তপন চট্টোপাধ্যায়। সকাল সাড়ে ৭টার মধ্যেই প্রচারে নেমে পড়ছেন তিনি। বাড়ি থেকে বেরনোর আগে অবশ্য এক গ্লাস ছাতুর সরবত চাইই চাই তপনবাবুর। সঙ্গে থাকছে প্রায় লিটার দুয়েক নুন-চিনি জল। দুপুরে খাবারের তালিকায় ভাতের সঙ্গে থাকছে ছোট মাছের ঝোল। তাঁর প্রতিপক্ষও ঘরে বসে নেই। সকাল ৮টার মধ্যে এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী প্রদীপ সাহাও নেমে পড়ছেন প্রচারে। তবে রোদের দাপটে দুপুরে ঘণ্টা তিনেক প্রচার বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানান প্রদীপবাবু।

কালনার তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ কুণ্ডুর ভোট ডায়েটও বেশ সাদামাটা। এই ক’দিন ভাত বন্ধ। শুধু চিঁড়ে, ছাতু খেয়েই আপাতত দিন কাটাচ্ছেন তিনি। বিশ্বজিৎবাবুর প্রচারে মাস্ট বাড়তি জামা, তোয়ালে আর গামছা। তবে বেলা ১২টার পর প্রচার বন্ধ করতে হচ্ছে বলে জানান বিশ্বজিৎবাবুর নির্বাচনী এজেন্ট প্রণব রায়। রবিবার বালিন্দর গ্রামে দুপুর ৩টে থেকে শুভেন্দু অধিকারীর সভা করার কথা থাকলেও পরে তা বিকেল ৫টায় করা হয়েছে বলে জানান প্রণববাবু। বিশ্বজিৎবাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী নিউটন মজুমদার আবার দুপুরে শসা খাচ্ছেন বিস্তর।

রোদের হাত থেকে বাঁচতে ফুলহাতা পাজামা, পাঞ্জাবিই ভরসা পূর্বস্থলী দক্ষিণের বিজেপি প্রার্থী রাজীব ভৌমিকের। সঙ্গে গলা ভেজানোর জন্য রাখছেন প্রচুর জল। দুপুরে খাবারের তালিকায় অবশ্যই থাকছে আম ডাল, শুক্ত আর উচ্ছে ভাজা। প্রচার করতে করতে গাছতলায় খানিক জিরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে মন্তেশ্বরের তৃণমূল প্রার্থী সজল পাঁজাকেও।

শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও খারাপ। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর শুক্রবার আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে। এপ্রিলের শুরু থেকেই তাপপ্রবাহ চলছে দুর্গাপুরে। বেলা খানিক গড়াতেই বাজারে দোকানিরা ঝাঁপ বন্ধ করছেন। রাস্তায় গুটি কয়েক লোকজনকে ঘোরাফেরা করতে দেখা যাচ্ছে। সমস্যায় পড়়ছে বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়ারা। একই হাল শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন বিধানসভার প্রার্থীদেরও। যেমন, দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের প্রচারে বেরোচ্ছেন সাদা বা সবুজ টুপি মাথায় দিয়ে। সঙ্গে রোদ চশমাটাও নিতে ভুলছেন না। দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ মজুমদারের পরনে থাকছে সাদা ফতুয়া আর পাঞ্জাবি। আসানসোল উত্তর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী ইন্দ্রাণী মিশ্র সকাল ৭টার মধ্যে বেরিয়ে পড়ছেন প্রচারে। সঙ্গে থাকছে তোয়ালে এবং ওআরএস। দুপুরের সময়টুকু প্রচারে ছেদ পড়লেও সেই সময়েই দলের নেতা-কর্মীদের বৈঠকগুলো সেরে নিচ্ছেন ইন্দ্রাণীদেবী।

এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ, দিনভর নিয়ম করে বাচ্চাদের জল খাওয়াতে হবে। বাইরে যাওয়ার সময় অবশ্যই থাকতে হবে ছাতা বা টুপি। দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকা যাবে না। রোদ মাথায় বাড়ি ফেরার পর ডাব, গ্লুকোজ, নুন-চিনি জল রাখা দরকার। রাত ও দুপুরের খাবারের তালিকাও যথাসম্ভব সহজপাচ্য হওয়া দরকার বলে চিকিৎসকেরা জানান। প্রার্থীরা ও বাড়ির বড়রা বাইরে থেকে এসেই যাতে শীতাতপ নিয়ন্তিত ঘরে ঢুকে না পড়েন, সে বিষয়েও খেয়াল রাখা দরকার। সংক্রামক ও মশাবাহিত রোগ সম্পর্কেও সচেতন থাকা দরকার।

হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, সোমবার শিল্পাঞ্চলে ভোটের আগে পরিস্থিতি বদলানোর কোনও ইঙ্গিত আপাতত নেই। ভোটারেরা যাতে রোদে অসুস্থ না হয়ে পড়েন, তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফে। হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ এবং ওআরএস মজুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে সব এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে, সেখানে জলের ট্যাঙ্কারও পাঠানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ভোটের লাইনের মাথায় ছাউনির ব্যবস্থা করা যায় কি না, সে বিষয়েও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। থাকছে ভ্রাম্যমান মেডিক্যাল টিম, অ্যাম্বুল্যান্স। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা জানান, ‘‘মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন সে বিষয়ে খেয়াল রাখা হচ্ছে।’’

প্রকৃতির মতিগতির দিকে তাকিয়ে ডান-বাম সব প্রার্থীর এখন একটাই চিন্তা, ভোটের আগে রোদের চ্যালেঞ্জটা কী ভাবে পার করা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement