প্রতীকী ছবি।
আসানসোল পুরভোটের জন্য ওয়ার্ডভিত্তিক বৈঠক করে, সেখান থেকে উঠে আসা স্থানীয় বিষয়গুলিকে তাঁদের প্রচারের কেন্দ্রে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি, সদ্য পদত্যাগ করা সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়ের উন্নয়নমূলক কাজগুলিও তাদের প্রচারে কাজে লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন। এই বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা।
জেলা রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতেরা জানাচ্ছেন, কুলটি, আসানসোল উত্তর ও দক্ষিণ, রানিগঞ্জ, জামুড়িয়া— এই পাঁচটি বিধানসভা এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে আসানসোল পুরসভার ১০৬টি ওয়ার্ড। ২০১৯-এর লোকসভা ভোট অনুযায়ী, ৯৮টি ওয়ার্ডে এগিয়ে ছিল বিজেপি। তবে ২০২১-এর বিধানসভার ফলের নিরিখে ৬৬টি ওয়ার্ডে এগিয়ে রয়েছে তারা। বিধানসভা ফলের নিরিখে রানিগঞ্জের ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে দু’টিতে, জামুড়িয়ায় ১৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে চারটিতে, আসানসোল দক্ষিণে ২২টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটিতে, আসানসোল উত্তরের ৩২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২০টিতে এবং কুলটির ২৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ন’টিতে এগিয়ে রয়েছে তৃণমূল।
তবে এই পরিসংখ্যানকে একেবারেই আমল দিতে নারাজ তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন (দাশু)। তাঁর দাবি, “২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনে ভোটে বিজেপি বেশির ভাগ ওয়ার্ডে জিতলেও ২০১৫-র পুরভোটে আমরা ৭৮টিতে জিতেছিলাম। এ বারেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটবে।” যদিও আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমানে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, “তৃণমূল স্বপ্ন দেখতেই পারে। কিন্তু সে স্বপ্ন সত্যি হবে না।”
শিবদাসন জানান, উৎসব মরসুম শেষ হলেই প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক ভাবে দলীয় বৈঠক হবে। প্রথমে রানিগঞ্জ, তার পরে জামুড়িয়ায় এবং এর পরে, বাকি বিধানসভা এলাকাগুলিতে এই বৈঠক হবে। দলের জেলা নেতৃত্ব জানান, প্রতিটি বৈঠক থেকে স্থানীয় উন্নয়নের কাজ এবং অন্য কী দাবিদাওয়া উঠে আসছে, তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। তার পরে, এলাকাভিত্তিক প্রচারের বিষয় নথিভুক্ত করে দলীয় নির্দেশ মেনে কাজ করা হবে। পাশাপাশি, আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি অভিজিৎ ঘটক জানান, বেসরকারি সংস্থায় স্থানীয়দের নিয়োগ, রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পের বিলগ্নিকরণের বিরোধিতার মতো বিষয়গুলিও প্রচারে উঠে আসবে।
ঘটনাচক্রে, সাম্প্রতিক সময়ে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের মতো নেতাদের প্রকাশ্যেই দলের প্রাক্তন ও বিদায়ী কাউন্সিলরদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে, ‘কোন্দল’-এর প্রশ্নটিও সংগঠনকে ভাবাচ্ছে বলে মত তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের। যদিও দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায় বলেন, “দলে কোনও কোন্দল নেই। সবাই এক সঙ্গে লড়বেন।”
দলের জেলা নেতৃত্বের সূত্রে জানা গিয়েছে, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা বিধানসভা ভোটের আগে-পরে কাউন্সিলরদের ভূমিকা কী ছিল, সে সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের কাছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক জেলা নেতার দাবি, “পিকে-র টিম সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে জমা দেবে। তা দেখে, জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করেই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনও নিশ্চিত করে কিছু বলার সময় আসেনি।”
শিবদাসন বলেন, “গত দু’টি লোকসভা ভোটে আসানসোল থেকে জিতে সাংসদ হয়েছেন বাবুল সুপ্রিয়। বর্তমানে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর উন্নয়নমূলক কাজের দৃষ্টান্তগুলিও আসন্ন পুরভোটে তুলে ধরা হতে পারে।” যদিও বিষয়টি নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি তথা দুর্গাপুর পশ্চিমের বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের কটাক্ষ: “বাবুল সুপ্রিয় ব্যক্তি হিসেবে নয়, বিজেপির সাংসদ হিসেবে উন্নয়নের কাজ করেছিলেন। সুতরাং, সে কৃতিত্ব বিজেপি ও কেন্দ্রের। আমরা প্রচারে সেটাই বলব।” তবে রাত পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে বাবুলের
প্রতিক্রিয়া মেলেনি।