কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ। —নিজস্ব চিত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে আইনি খরচ বাবদ ব্যয় হওয়া ৭০ লক্ষ টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে সোমবার কাজী নজরুল বিশ্বিবিদ্যালয়ে দিনভর বিক্ষোভ দেখাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি)। কর্মীদের বার করে দিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। তার ফলে পঠনপাঠনে বিঘ্ন না ঘটলেও, প্রশাসনিক কার্জকর্ম ব্যাহত হয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে। টাকা ফেরত না পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ-অবস্থান চলবে বলে টিএমসিপি-র হুঁশিয়ারি।
সোমবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ শুরু হয় এই বিক্ষোভ। সংগঠনের কয়েকশো কর্মী-সমর্থক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থানে বসে পড়েন। আচমকা তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন দফতরের কর্মীদের বার করে দিয়ে ভবনের সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে দেন। বিক্ষোভে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। স্লোগানে পড়াশোনাতেও সমস্যা হয় বলে অভিযোগ। প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়।
কেন এই বিক্ষোভ? টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি অভিনব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে বিভিন্ন মামলার জন্য আইনজীবীদের বিল মেটানো-সহ নানাবিধ বিষয়ে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এই বিপুল টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে ফেরাতে হবে কর্তৃপক্ষকে। তা ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ-অবস্থান চলবে।’’ অভিনবের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও উন্নতি হয়নি। উন্নত রসায়নগার না থাকায় পড়ুয়ারা গবেষণার কাজ ঠিক ভাবে করতে পারছেন না। পাঠাগারের অবস্থা ভাল নয়। পড়ুায়ারা চাহিদা মতো বই পাচ্ছেন না। অথচ, পড়ুয়াদের বেতন বৃদ্ধি করা হচ্ছে। সেই টাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি খরচ মেটানো হচ্ছে। তা বন্ধ করতে হবে, দাবি তাঁদের।
দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, প্রশাসনিক দফতরে কোনও কর্মী নেই। সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে পড়ুয়ারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেননি উপাচার্য দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও নিয়ামক চন্দন কোনার। নিয়ামক ফোনে বলেন, ‘‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত নেই। তবে বিক্ষোভের কথা শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন হচ্ছে না, এ কথা ঠিক নয়। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আইনি খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিনান্স কমিটি করেছে।’’ উপাচার্য বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় নিজে থেকে কোনও মামলা করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে যে অমূলক মামলা হয়েছে, তাতে শুধুমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা হয়েছে। প্রতিটি মামলায় বিশ্ববিদ্যালয় জিতেছে। তাতে প্রমাণ, বিশ্ববিদ্যালয় অচল করার চেষ্টায় কেউ এই মামলা করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটা পদক্ষেপ সেই অর্থে ঠিক।’’
তবে সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও কথা হয়নি বলে জানানো হয়েছে। আজ, মঙ্গলবারও অবস্থান-বিক্ষোভ চলবে বলে টিএমসিপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন।