প্রতীকী ছবি।
সকাল পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে ছিল ধোঁয়াশা। শেষ পর্যন্ত শনিবার দুপুরে মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় হাজির হয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন কালনার তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু। দলবদলের পরে ফোনে তিনি দাবি করেন, দলীয় নেতৃত্বকে নিজের দাবিদাওয়া জানানোর পরে তিনি অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু তিনি দলেই থাকছেন, এ কথা শুক্রবার রাতে তৃণমূলের এক সাংসদ সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন জেনে বিরক্ত হন। এর পরেই শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করে মেদিনীপুরে পৌঁছন।
তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত কয়েকমাস ধরেই দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল বিশ্বজিৎবাবুর। দলে তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা হিসেবে পরিচিত দেবপ্রসাদ বাগের গোষ্ঠীর প্রভাব বাড়ছিল এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজিৎবাবু মহকুমার যে নেতাদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন, তাঁদের সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয়। সম্প্রতি দল তাঁকে কালনা শহর সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেবপ্রসাদবাবুকে বসায়। এর পরে, দলের কোনও কর্মসূচিতে বিধায়ককে দেখা যাচ্ছিল না। বিধায়কের অনুগামী হিসেবে পরিচিতদের অনেকের দাবি, সপ্তাহ দু’য়েক আগে বিশ্বজিৎবাবু বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনার কথা তাঁদের জানান।
বুধবার কাঁকসায় সাংসদ সুনীল মণ্ডলের বাড়িতে শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক করতে যাওয়ার সময়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্ষোভপ্রকাশ করেন বিশ্বজিৎবাবু। আবার তার পর দিন তিনি দাবি করেন, দলে ‘শুদ্ধকরণের’ দাবিতে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতায় দলের রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমার যা বলার ছিল, দলীয় নেতৃত্বকে বলেছি। দেখা যাক।’’ শুক্রবার তাঁকে কালনা শহরে দেখা যায়নি। তবে শহরে যে তৃণমূল কার্যালয়ে তিনি বসতেন, সেখান থেকে তাঁর জিনিসপত্র সরাতে দেখা যায়। রাতে এক তৃণমূল সাংসদ দাবি করেন, বিশ্বজিৎবাবু থাকছেন তৃণমূলেই।
কিন্তু শনিবার বিজেপিতে যোগ দেন কালনার বিধায়ক। এর পরে ফোনে তিনি দাবি করেন, ‘‘এলাকায় দলের নেতৃত্বে কিছু রদবদলের দাবি জানাই রাজ্য নেতৃত্বকে। তার পরে কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। কলকাতায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলাম। কিন্তু শুক্রবার রাতে ওই সাংসদের মন্তব্য জেনে বিরক্ত হই। শুভেন্দুবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ দিন ভোরেই মেদিনীপুর রওনা দিই।’’ সে ক্ষেত্রে আগের দিন কার্যালয় থেকে নিজের জিনিসপত্র সরালেন কেন? বিশ্বজিৎবাবুর দাবি, ‘‘একটি প্যাড আনতে বলেছিলাম। অত্যুৎসাহী কিছু কর্মী আরও নানা জিনিস নিয়ে আসেন।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বিশ্বজিৎবাবুর দলত্যাগে কোনও প্রভাব পড়বে না। এ দিনের পরে কালনা মহকুমার চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে মাত্র একটিতেই তৃণমূলের বিধায়ক রইলেন— পূর্বস্থলীর দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। দলের জেলা সভাপতি স্বপনবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘বিশ্বজিৎ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেছে, আবার দফতর থেকে চেয়ার-টেবিলও বার করেছে শুনেছি। এ সবের কোনও দরকার নেই। তাঁর জন্য কালনায় কোনও প্রভাব পড়বে না।’’ দলের অন্যতম রাজ্য মুখপাত্র দেবু টুডুর অভিযোগ, ‘‘দলে থেকে ক্রমাগত দলের ক্ষতি করছিলেন। জনতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক নেতা চলে যাওয়ায় দলের ভালই হবে।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি ধনঞ্জয় হালদারের প্রতিক্রিয়া, ‘‘লোকসভা ভোটের পরে, এলাকায় দল আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশ্বজিৎবাবু এলে তাঁর সঙ্গেও কিছু লোকজন আসবেন। লাভ হবে দলের।’’