পূর্বস্থলীতে বিক্ষোভ। নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েই পুরনো দলের জেলা নেতৃত্বের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের এক সাংসদ ও দুই বিধায়ক। তাঁদের ‘বিশ্বাসঘাতক’ দাবি করে রবিবার পাল্টা সরব হলেন তৃণমূল নেতৃত্বও।
এ দিন কালনা ও মন্তেশ্বরে দলের তরফে সভা-মিছিল করা হয়। মন্তেশ্বরের সভায় জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ দাবি করেন, ‘‘মমতাদির (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) জন্য ক্ষমতা ভোগ করে গেলাম, তার পরে পিছন থেকে ছুরি মারলাম— এটা বিশ্বাসঘাতকতা ছাড়া আর কী!’’ সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়ককে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ দাবি করে কালনায় মিছিল করে তৃণমূল।
শনিবার মেদিনীপুরে অমিত শাহের সভায় বিজেপিতে যোগ দেন বর্ধমান পূর্বের তৃণমূল সাংসদ সুনীল মণ্ডল, কালনার বিধায়ক বিশ্বজিৎ কুণ্ডু ও মন্তেশ্বরের বিধায়ক সৈকত পাঁজা। তৃণমূল সূত্রের দাবি, সে রাতেই দলের তরফে ওই নেতাদের অনুগামীদের মনোভাব ‘পরখ’ করে নেওয়া হয়। দুই বিধায়কের অনুগামী হিসেবে পরিচিতদের অনেকেই জানিয়ে দেন, তাঁরা তৃণমূলেই থাকছেন। যাঁদের ক্ষোভ রয়েছে, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে শাসক দল সূত্রের দাবি। রবিবার বিকেলে মন্তেশ্বরের দেনুড়ের মৌসায় কর্মী সম্মেলন ও তার পরে মিছিল করে তৃণমূল। ছিলেন বাগবুল ইসলাম, আজিজুল শেখ, আহমেদ হোসেন শেখ-সহ দলের নেতারা।
শনিবার রাতেই কালনা শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল বার করে তৃণমূল। ছিলেন দলের শহর সভাপতি দেবপ্রসাদ বাগ, রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু-সহ বেশ কিছু নেতা। মিছিল থেকে তৃণমূল কর্মীরা সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া বিধায়কের বিরুদ্ধে অনৈতিক ভাবে পরিবারের অনেকের সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করানোর অভিযোগ তোলেন। দেবপ্রসাদবাবু দাবি করেন, ‘‘দল থেকে যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন, তা ফেরত দেওয়া উচিত।’’ দেবুবাবুর বক্তব্য, ‘‘দলের কর্মীরাই আসল। অকর্মণ্য লোকজন চলে যাওয়াই ভাল।’’
শনিবার বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই সাংসদ ও মন্তেশ্বরের বিধায়ক জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তোলেন। দলের সভায় না ডাকা, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে নালিশ করেও ফল না মেলার অভিযোগ করেন তাঁরা। তাঁকে ভোটে হারানোর চেষ্টা হয়েছিল বলেও দাবি করেন সাংসদ সুনীলবাবু। এ দিন স্বপনবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘সাংসদ সুনীল মণ্ডলকে আমরা লড়াই করে দু’বার জেতালাম। এখন বলছেন, বৈঠকে ডাকা হয়নি! ওগুলো অছিলা, বাহানা। সাংসদ পদ ছেড়ে দিক।’’ মন্তেশ্বরের বিধায়ক সম্পর্কে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সৈকত আমার ছেলের মতো। ওঁর কোনও ক্ষতি করিনি। সব সভাতেই তাঁকে ডাকা হত। জানি না কেন এখন আমার বিরুদ্ধে বলছে!’’
রবিবার সন্ধ্যায় কালনার সিদ্ধেশ্বরী মোড়ে সভা করে তৃণমূল। সেখানে বিশ্বজিৎ কুণ্ডুকে ‘বেইমান’ বলে দাবি করে স্বপন দেবনাথের মন্তব্য, ‘‘সাহস থাকলে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দিন।’’ কালনা পুরসভার ১৩ জন কাউন্সিলর দলের সঙ্গে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দাবি তাঁর। মূলত বিশ্বজিৎবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই সভা হয়। কালনা পুরসভার প্রশাসক দেবপ্রসাদ বাগকে সেখানে দেখা যায়নি। স্বপনবাবুর বক্তব্য, ‘‘পুর-প্রশাসক অন্য কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।’’
এ দিন ফোনে বিশ্বজিৎবাবু বলেন, ‘‘রাতে কালনা ফেরার চেষ্টা করছি। এলাকায় দ্রুত সভা করার চেষ্টা হচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, ওই সভায় বেশ কিছু লোকজন যোগ দেবেন বিজেপিতে। তৃণমূলের অভিযোগ প্রসঙ্গে তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘এত চাকরি আমার পরিবারের লোকজন পাননি। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে মুখ পুড়বে তৃণমূলেরই। কারণ, আমি নামের তালিকা প্রকাশ করলে অনেক বড় নেতার নাম জড়িয়ে যাবে।’’ বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি ধনঞ্জয় হালদার বলেন, ‘‘দলে সদ্য যাঁরা যোগ দিয়েছেন, তাঁদের নিয়ে কী ভাবে কাজ করতে হবে, সে ব্যাপারে এখনও দলের নির্দেশ এসে পৌঁছয়নি। আশা করছি, দ্রুত তা চলে আসবে।’’