শহিদবেদি ভাঙছেন শহিদ পরিবারের সদস্য় অনন্ত। নিজস্ব চিত্র।
কেশবাড়ি গণহত্যার স্মরণে তৈরি শহিদবেদি শুক্রবার নিজের হাতে ভেঙে দিলেন শহিদ পরিবারেরই সদস্য অনন্ত কেশ। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগেকার ওই ঘটনায় নিহত হয়েছিলেন অনন্তের বাবা এবং দুই দাদা। ঘটনা পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম থানার বেলাড়ি গ্রামের।
তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য অনন্তের দাবি, দল তাঁদের পরিবারের প্রতি অবিচার করেছে। তাই বীতশ্রদ্ধ হয়েই তিনি এই কাজ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্ব আমার বাবা-দাদাকে মর্যাদা দেয়নি। আমার পরিবারের প্রতি অবিচার করেছে। তাই শহিদবেদি ভেঙে দিয়েছি।’’ শুক্রবারই ছিল কেশবাড়ি গণহত্যার দিন। তার আগে শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকেই শহিদবেদি ভেঙে দেওয়ার ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।
অভিযোগ, ১৯৮৫ সালে ২ জুলাই বেলাড়ি গ্রামের বাসিন্দা তৎকালীন কংগ্রেস নেতা কমলাকান্ত কেশের বাড়ি ঘেরাও করেছিল সিপিএম আশ্রিত দুস্কৃতীরা। অনন্তের বাবা কমলাকান্ত এবং তাঁর দুই দাদা অশোক ও অসীম কেশকে পিটিয়ে, কুপিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয়েছিল। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন কমলাকান্তের ছোট ছেলে অনন্ত।
সাঁইবাড়ি গণহত্যার মতোই কেশবাড়ি গণহত্যার স্মরণেও প্রতি বছরই রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করত কংগ্রেস। পরবর্তী কালে শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান শুরু করে তৃণমূল। বেলাড়ি গ্রামে বিল্বগ্রাম অঞ্চল তৃণমূল দফতরের সামনে তৈরি হয় শহিদবেদি। শুক্রবার সকালে অনন্ত শাবল দিয়ে সেটি ভেঙে দেন অনন্ত।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সপ্তাহ দু’য়েক ধরেই পাড়ার জলনিকাশি নালা নিয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে অনন্তের পরিবারের সঙ্ঘাত চলছে। অনন্ত শুক্রবার বলেন, ‘‘পাড়ায় সরকারি জায়গার ওপর নিকাশিনালা গুলি বন্ধ করে ঘর করেছে কয়েকজন। সে সব নালা সংস্কার হচ্ছে না। অথচ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের একাংশের মদতে জোর করে আমাদের জায়গার উপর দিয়ে নালা কেটে জলনিকাশি করা হচ্ছে। আমি প্রতিবাদ করলে খুনের হুমকি দিচ্ছে। পুলিশকে জানিয়েও কোনও ফল হয়নি।’’
ঘটনা প্রসঙ্গে বিল্লগ্রাম অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি ফাল্গুনী গোস্বামী বলেন, ‘‘আজকের এই ঘটনার নিন্দা করছি। দলের পক্ষ থেকে অনন্ত কেশকে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। দল কেশ পরিবারের সদস্যদের যথাযোগ্য সম্মান দিয়েছে । অনন্ত মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’ ঘটনার বিষয়ে রাজ্য তৃণমূলের মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, ‘‘খোঁজখবর নিয়ে বিস্তারিত জানতে হবে। তবে আমাদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেশ পরিবারকে সম্মান দিয়েছেন।’’