টিকা দিচ্ছেন তাব্বাসুম আরা। —নিজস্ব চিত্র
টিকাকরণ শিবিরে চিকিৎসক, নার্স সকলেই রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বসিয়ে রেখে নিজেই টিকা দিলেন আসানসোল পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূল নেত্রী তবস্সুম আরা। শনিবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার কুলটির সীতারামপুরের চবকা এলাকার এক টিকাকরণ শিবিরে তিনি গুড়িয়া মাহাতো নামে এক মহিলাকে টিকা দিয়েছেন। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তবস্সুমের কাজের সমালোচনা করে টুইট করেছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নেমেছে তৃণমূলও। জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকরা বিষয়টির সমালোচনা করলেও তবস্সুমের অবশ্য সাফাই, সচেতনতা বা়ড়াতেই তিনি এমনটা করেছেন। তাঁর আরও দাবি, তিনি স্কুলে পড়াকালীন নার্সিং কোর্স করেছিলেন।
শনিবার চবকার যৌনকর্মীদের জন্য ওই টিকাকরণ শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গিয়েছিলেন তবস্সুম। দেখা যায়, এক মহিলাকে টিকা দেওয়ার আগে নার্স তবস্সুমের হাতে সিরিঞ্জ তুলে দেন। এর পর সেই সিরিঞ্জ দিয়ে তিনি গুড়িয়াকে টিকা দেন। আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তবস্সুম ওই পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্যও। এর পর বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আসানসোল পুরসভার স্বাস্থ্য আধিকারিক দীপক গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এটা প্রক্রিয়া নয়। যিনি স্বাস্থ্যকর্মী, তাঁরই টিকা দেওয়ার কথা।’’ সমালোচনার সুরে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অশ্বিনীকুমার মাজিরও। তিনি বলেন, ‘‘স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ স্বাস্থ্যকর্মীরা করলেই ভাল। অন্য কারও করা উচিত নয়। এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয়।’’
তবস্সুম যাঁকে টিকা দিয়েছেন সেই গুড়িয়া বলছেন, ‘‘চিকিৎসক পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। আমাকে যিনি টিকা দিয়েছেন, তিনি ডাক্তার বা নার্সও নন।’’
বিষয়টি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি। কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দারের বক্তব্য, ‘‘উনি কর্পোরেশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন। টিকাকরণ শিবিরে চিকিৎসক এবং নার্সরা থাকা সত্ত্বেও নিজের হাতে টিকা দিয়েছেন। এটা নিন্দনীয় কাজ। উনি তো চিকিৎসক বা নার্স নন।’’
বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হতেই তা নিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছেন তবস্সুম। তাঁর সাফাই, ‘‘আমি সচেতনতা বাড়াতে স্রেফ টিকাটা হাতে ধরেছিলাম। আর কোনও উদ্দেশ্য ছিল না।’’
তবে এ সব বলে বিতর্ক ঠেকাতে পারেননি তবস্সুম। আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় টুইট করে বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন। তিনি লেখেন, ‘প্রশাসকদের উপর রাজ্য সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। আসানসোল পুরনিগমের প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য তবস্সুম আরা নিজে লোকজনকে টিকা দিয়েছেন। শতাধিক মানুষের জীবনের ঝুঁকি... তাঁর রাজনৈতিক পরিচয় কি তবস্সুমকে শাস্তি থেকে রক্ষা করবে?’
এ প্রসঙ্গে তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘যদি এ রকমটা হয়ে থাকে তা হলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। এখন তো বিভিন্ন কাজে হাতুড়ে ডাক্তারদেরও সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।’’