—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল তুঙ্গে। বিধায়কের বিরুদ্ধে শুক্রবার আউশগ্রাম থানায় এফআইআর দায়ের করলেন তৃণমূলেরই এক নেতা।
দলীয় নেতার সঙ্গে আলাপচারিতায় পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের ‘বেফাঁস' মন্তব্য ঘিরে এলাকার রাজনৈতিক আবহাওয়া সরগরম বেশ কয়েকদিন ধরে। তার মধ্যে আউশগ্রাম-২ ব্লকের তৃণমূল সহ-সভাপতি উজ্জ্বল পাল বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, তৃণমূল নেতার অভিযোগ করেছেন, একটি ভাইরাল ভিডিয়োতে বিধায়ককে যা বলতে শোনা গিয়েছে, তাতে তাঁর জীবনহানির আশঙ্কা রয়েছে। এবং এটা বিধায়কের প্রত্যক্ষ হুমকি। ওই তৃণমূল নেতার আরও দাবি, ‘‘বর্তমান বিধায়ক অভেদানন্দ পূর্ব বর্ধমান জেলার তৃণমূল সভাপতি তথা কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে প্রাণে মেরে ফেলার চক্রান্ত করছেন।’’
যদিও ভাইরাল ভিডিয়ো (আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি) এবং তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর নিয়ে আউশগ্রামের বিধায়কের দাবি, ‘‘সামান্য ঠাট্টা ইয়ার্কিকে যে ভাবে অন্য মাত্রা দেওয়া হচ্ছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।’’ তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমার বিরুদ্ধে কয়েক জন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র করছে। দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথাও হয়েছে।’’
ঘটনার শুরু গত রবিবার। আউশগ্রামের বিধায়ক অভেদানন্দের আহ্বানে গুসকরার একটি লজে তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনী হয়। তার পর সাংবাদিক বৈঠক হয়। সেখানে আউশগ্রাম- ১, আউশগ্রাম- ২ ব্লক তৃণমূলের নেতৃত্ব এবং গুসকরা শহর তৃণমূল কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিক বৈঠকে এক নেতা বক্তব্য রাখার সময় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারকে তাঁর পাশে বসে থাকা দলীয় এক নেতা আব্দুল লালনের সঙ্গে ফিসফিস করে কিছু কথা বলতে দেখা যায়। যদিও সেই আলাপচারিতার কথা তখন অন্যদের কানে আসেনি। কিন্তু পরে ওই ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয়। সাংবাদিক বৈঠকের সময় অভেদানন্দ এবং তৃণমূল নেতা আব্দুল লালনের কথাবার্তা তাঁদের সামনে রাখা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের বুম এবং বিধায়কের জামার কলারে লাগানো মাইক্রোফোনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে অভেদানন্দকে বেশ কিছু বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়। এমনকি, দলের সাংসদ অসিত মালের খাবারে ‘লঙ্কার গুঁড়ো মিশিয়ে মেরে’ দেওয়ার কথাও বলতেও শোনা যায়। বস্তুত, হাসতে হাসতেই এই কথাগুলো বলছিলেন আউশগ্রামের বিধায়ক। কিন্তু দলের এক গোষ্ঠী একে মোটেই হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না। এই ঘটনার জেরে অস্বস্তিতে পড়েছেন বিধায়ক।
শুক্রবার তৃণমূল নেতা যে এফআইআর করেছেন, তাতে অবশ্য অসিত মালের প্রসঙ্গ নেই। তবে ওই নেতার আশঙ্কা, ‘‘তৃণমূল জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়কে মেরে দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে।’’ ইতিমধ্যে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আউশগ্রাম থানার পুলিশ তদন্তও শুরু করে দিয়েছে। এ নিয়ে রবীন্দ্রনাথের বক্তব্য, ‘‘উজ্জ্বল পাল আমার এক জন শুভাকাঙ্খী হিসাবে থানায় অভিযোগ করেছেন। তিনি হয়ত ভেবেছেন, আমার কিছু ক্ষতি হতে পারে।’’ পাশাপাশি দলের বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘মি এটা চাইনি। দলের উর্ধ্বতন নেতৃত্ব যা ঠিক করে দেবেন, আমরা সেটাই মেনে নেব।’’
এ নিয়ে বিজেপির আউশগ্রাম বিধানসভার কেন্দ্রের আহ্বায়ক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘গোষ্ঠীকোন্দল যে কী অবস্থায় গিয়েছে, তা মানুষজন সবই দেখছে। আসলে এঁরা পড়াশোনা কিছুই করেননি। তাই এঁরা বেপরোয়া। কাকে মারবে আর কাকে রাখবে, সেটাই বুঝতে পারছে না।’’