ফাইল চিত্র।
এক লক্ষ টাকা ‘তোলা’ না পেলে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ ওঠার পর থেকে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির তৃণমূল নেতা সন্দীপ পরামানিককে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে এলাকায়।
তৃণমূলের মেমারি ১ ব্লকের সহ-সভাপতি সন্দীপের বাড়ি মেমারির গোপ-গন্তার ২ পঞ্চায়েতের রাধাকান্তপুরে। সে গ্রামেরই বাসিন্দা সত্যব্রত হাজরা সম্প্রতি মেমারি থানায় সন্দীপের বিরুদ্ধে ‘তোলা’ চাওয়ার অভিযোগ করেছেন। অভিযোগে জানানো হয়েছে, স্থানীয় নিতাই-গৌর আশ্রমের সামনে, অনেক আগে একটি ডোবা ছিল। তা ভরাট হয়ে গিয়েছে। সেখানে দু’টি বাড়িও হয়েছে। বর্তমানে ওই দাগ নম্বরে তিনি পঞ্চায়েতের অনুমোদন নিয়ে কয়েকটি গ্যারাজ তৈরি করছিলেন। কিন্তু ২০ জুলাই স্থানীয় তৃণমূল নেতা সন্দীপ তাঁকে বাড়িতে ডেকে এক লক্ষ টাকা চান। তা না দিলে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়।
সন্দীপের দাবি, ‘‘অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে বদনাম করতেই এ সব করা হয়েছে। কাজ বন্ধ করেছে পঞ্চায়েত। ডোবা বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করার জন্য হয়তো এই নির্দেশ দিয়েছে। এর সঙ্গে, আমি জড়িত নই।’’ গোপ-গন্তার ২ পঞ্চায়েতের প্রধান অঞ্জনা মালিকের দাবি, ‘‘এলাকার লোকেরা অভিযোগ করেছেন বলে, আমরা ওই কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি।’’ মেমারি থানা সুনির্দিষ্ট ধারায় সন্দীপের নামে মামলা রুজু করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে।
আগেও বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন সন্দীপ। সে সব সমাজ-মাধ্যমে চর্চার মধ্যে রয়েছে (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি)। তৃণমূলের একাংশের দাবি, ২০১৭ সালে সার কেনা নিয়ে বিতর্ক হয় মেমারি ১ ব্লকের গোপ-গন্তার কো-অপারেটিভ অ্যাগ্রিকালচার ক্রেডিট সোসাইটিতে। অভিযোগ, সার কেনা ও বিক্রির মাঝে ৯০০ বস্তা সার ‘উধাও’ হয়ে যায়। ২০১৯ সালের মে মাসে বিষয়টি ধরা পড়ার সময় ওই সমবায়ের সম্পাদক ছিলেন সন্দীপ। যা নিয়ে বিতর্ক বাধে।
দলের কর্মীদের একাংশের দাবি, সন্দীপ পূর্ত দফতরের ঠিকা-কর্মী। কিন্তু তিনি বর্ধমানের পূর্ত ভবনের দোতলার অফিসে নিয়মিত যান না বলে বেশ কয়েকজন প্রশাসনের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। গত ৭ জুলাই লিখিত চিঠিতে দাবি করা হয়, সন্দীপ এক জন ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ নেতা। তিনি অফিস না গিয়ে প্রতিদিন এলাকাতেই থাকেন।
সমাজ-মাধ্যমে ঘুরে বেড়ানো হাতে লেখা একটি কাগজে (আনন্দবাজার সত্যতা যাচাই করেনি) বিভিন্ন অনুচ্ছেদে তাঁর সম্পর্কে নানা কথা ঘুরছে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, ‘দল ক্ষমতায় আসার পরে পঞ্চায়েতের ঘর দখল করে তিনি দোকান করেছেন’।
তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করে সন্দীপের দাবি, তিনি গোষ্ঠী-রাজনীতির শিকার হচ্ছেন। তাঁর কথায়, “দলের নেতা নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় (পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য) প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে বার বার মিথ্যা অভিযোগ করে আমাকে বিতর্কিত করে তুলছেন।’’ নিত্যানন্দের পাল্টা দাবি, “নিজের জালেই জড়িয়ে পড়ে, অন্যের বদনাম করতে চাইছেন সন্দীপ।’’
দলের অন্দরে সন্দীপ বিধায়ক তথা তৃণমূলের মেমারি ১ ব্লক সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্যের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলেই পরিচিত।
বৃহস্পতিবার মধুসূদন বলেন, “অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। তবে ছ’মাস আগেই দলের সহ-সভাপতির পদ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সন্দীপ পদত্যাগের চিঠি দিয়েছিলেন। দল সে চিঠি যেমন গ্রহণ করেনি, তেমনই সন্দীপও নিজেকে দলের কাজ থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন।’’