এ ভাবেই দিনের শুরু হয় তৃণমূল কাউন্সিলরের। নিজস্ব চিত্র।
ভোর হলেই শাসকদলের এই কাউন্সিলরকে দেখা যায় গলায় গামছা জড়িয়ে এলাকার বাজারে বসে রয়েছেন সব্জির পসরা সাজিয়ে। তবে সকালবেলার বিক্রিবাটা শেষে খুচরো ব্যবসায়ী থেকে তিনি আবার জনপ্রতিনিধির ভূমিকায়। নাম শিপুল সাহা। বাড়ি পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুরে। তিনি ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর।
আদতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার হাবড়ার বাসিন্দা শিপুল। বাবা জহর সাহা ছিলেন ডালমিলের শ্রমিক। ৮ বছর বয়স থেকে হাবড়া রেল স্টেশনে শশা বিক্রি করতেন জহর। রুটিরুজির টানে তিনি দুর্গাপুর আসেন ১৯৮২ সালে। তার দু’বছর পর স্বপরিবার শিপুলরাও দুর্গাপুরে। স্টেশন চত্বরে ফুটপাতে ফল বিক্রি করতেন শিপুলের বাবা। থাকতেন শ্রমিকনগরে একটি ভাড়াবাড়িতে। কোনও রকমে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা শেষ করেন শিপুল। সেটাও খুচখাচ ব্যবসা করতে করতেই।
ইদানীং শাসকদলের ছোট-বড় নেতার সম্পত্তি নিয়ে কটাক্ষ করে বিরোধীরা। সেখানে শিপুলের নিজস্ব কোনও বাড়িই নেই। আনন্দবাজার অনলাইনকে শিপুল বলেন, ‘‘আমার নিজস্ব বাড়ি নেই। স্ত্রী, দুই সন্তান এবং বাবা আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। মেয়ে বারাসতের একটি কলেজে মনস্তত্ত্ব নিয়ে পড়াশোনা করছে। ছেলে স্কুলে পড়ে।’’
শিপুলের কথায়, ‘‘ছোট থেকে ব্যবসা করেছি। এখনও ভোররাতে ঘুম থেকে উঠি। সব্জি নিয়ে চলে যাই বাজারে। সকাল থেকে ১০টা পর্যন্ত বিক্রিবাটা করি বাড়ি এসে স্নান সারি। পুজো করি। খাওয়াদাওয়া করে চলে যাই দলীয় কার্যালয়ে। ১টা পর্যন্ত সেখানে থাকার পর যাই পুরসভায়। আবার বিকেলে ব্যবসা করি। সন্ধ্যা ৭টার পর দলীয় কার্যালয়ে চলে যাই। তার মধ্যে সময় করে এলাকা ঘুরে মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা শুনি।’’
গত পাঁচ বছরের কাউন্সিলর শিপুল। তাঁর কথায়, ‘‘এলাকাবাসীকে সেরা পরিষেবা দিতে সর্বতো ভাবে চেষ্টা করেছি। তবে ১০০ শতাংশ কাজ করে উঠতে পারিনি। সামনের ভোটে দল টিকিট দিলে আবার লড়ব। কাউন্সিলর হলে এলাকার অসমাপ্ত কাজ শেষ করব।’’ আর যদি টিকিট না পান? প্রশ্ন শুনেই শিপুলের জবাব, ‘‘দলের হয়ে কাজ করব। দলের সিদ্ধান্তই মাথা পেতে নেব।’’
সব্জি ব্যবসায়ী থেকে নেতা হলেন কী ভাবে? শিপুলের জবাব, ‘‘শ্রমিক নগর স্পোর্টিং ক্লাবের সদস্য হয়ে সামাজিক কার্যকলাপ করতাম। ১৯৯২ সালে রাজনৈতিক জীবন শুরু করি কংগ্রেসে। ১৯৯৮ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরি করার পর থেকেই তাঁর সঙ্গে আছি।’’
২০১৭ সালে প্রথম ভোটে লড়া। ১৩০০ ভোটে জয়ী হয়ে কাউন্সিলর হন শিপুল। সব্জি দোকানি-কাউন্সিলরের কথায়, ‘‘প্রথমে কাউন্সিলর হিসেবে ৬,৭০০ টাকা মাসিক ভাতা পেতাম। কয়েক বছর ধরে ৯,৮০০ টাকা ভাতা পাই। সব্জি বিক্রি না করলে তো সংসার চলবে না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনাও হবে না। তাই সকালবেলা রুটিরুজি জুটিয়ে তার পরে জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের কাজ করি।’’
শিপুল রাজনীতি করলেও নিজের পেশা থেকে কখনওই সরবেন না বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সব্জি বিক্রি আমার পেশা। পেশাকে কখনও ছোট করে দেখি না। আগামিদিনে সব্জিই বিক্রি করব।’’
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের বড় অংশ কাউন্সিলরের কাজে খুশি। তাঁদের দাবি, শিপুলের আমলে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। কাউন্সিলর হওয়ার পরেও ওঁর চালচলনে কোনও পরিবর্তন দেখেননি তাঁরা। আগেও সব্জি বিক্রি করতেন। এখনও বাজারে বসে সব্জিই বিক্রি করেন কাউন্সিলর।