রঘুনাথচকে। নিজস্ব চিত্র
২০১১-র পরে থেকে বিভিন্ন ভোটে গোটা রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিম বর্ধমানেও সিপিএমের রক্তক্ষরণ থামার কোনও লক্ষণ এ পর্যন্ত দেখা যায়নি। এই মুহূর্তে জেলার ৬২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে সিপিএমের উপস্থিতি হাতে গোনা। এমন এক আবহে, ফের দুয়ারে কড়া নাড়ছে আরেকটি ভোট, পঞ্চায়েত। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম ‘বিকল্প গ্রামসভা’ শীর্ষক একটি কর্মসূচি পালন করছে জেলায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান, এর মাধ্যমে সিপিএম ‘হারানো সংগঠনকে’ ফিরে পাওয়ার এবং জনসংযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করছে। যদিও, তৃণমূল ও বিজেপি সিপিএমের এই কর্মসূচিকে আদৌ আমল দিচ্ছে না।
জেলায় এই মুহূর্তে পঞ্চায়েত স্তরে সিপিএম কোথায় দাঁড়িয়ে রয়েছে? জেলায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে ৬২টি পঞ্চায়েতের মধ্যে একমাত্র রানিগঞ্জের ছয় সংসদ বিশিষ্ট আমরাসোঁতা পঞ্চায়েতটি সিপিএমের দখলে ছিল। পাঁচ জন সদস্য ছিলেন সিপিএমের। কিন্তু ২০২১-এর বিধানসভা ভোটের আগে ওই পাঁচ জনের চার জনই তৃণমূলে যোগ দেন। এ ছাড়া, এই মুহূর্তে রানিগঞ্জের বল্লভপুর পঞ্চায়েতে দু’টি এবং কাঁকসা পঞ্চায়েতে দু’টি সংসদে রয়েছেন সিপিএম প্রতিনিধিরা। পঞ্চায়েত সমিতিগুলির মধ্যে একমাত্র রানিগঞ্জে এক জন সিপিএম প্রতিনিধি রয়েছেন। জেলা পরিষদ বিরোধীশূন্য। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেও সিপিএমের জেতা তিনটি কেন্দ্র ২০২১-এ হাতছাড়া হয়েছে। এমনকি, জেলার ভোট-রাজনীতিতে শ্রমিক সংগঠনগুলির প্রভাব রয়েছে বলে মনে করা হয়। সেখানেও বামেদের অবস্থা আগের তুলনায় কিছুটা দুর্বল হয়েছে বলেই মত। সিটু সূত্রে জানা গিয়েছে, পাঁচ বছর আগেও জেলায় তাদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬৮ হাজার। এখন তা হয়েছে ৫৮ হাজার।
এমন এক নির্বাচনী-পরিসংখ্যানের অতীত-আবহে দাঁড়িয়ে সিপিএমের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচার-কৌশল কী হবে, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মধ্যে। সিপিএম সূত্রে জানা যাচ্ছে, মানুষের ক্ষোভ-অভিযোগের কথা বেশি করে শুনতেই আয়োজন করা হয়েছে ‘বিকল্প গ্রামসভার।’
ইতিমধ্যেই বল্লভপুর, নূপুর, রঘুনাথচকে এই কর্মসূচি হয়েছে। কী ভাবে হচ্ছে এই সভা? সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামবাসীকে ডেকে বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানে গ্রামবাসী বিভিন্ন দাবি, অভিযোগের কথা জানাচ্ছেন। সেগুলি প্রস্তাব আকারে লিখে রাখা হচ্ছে। সিপিএম নেতৃত্বের অভিযোগ, আবাস যোজনায় বাড়ি, একশো দিনের কাজের বকেয়া মজুরি না পাওয়া, রেশনে বৃদ্ধদের আঙুলের ছাপ না মেলায় জিনিসপত্র না পাওয়া, সরকারের দেওয়া সার, বীজ ঠিক সময়ে না পাওয়ার মতো বিষয়গুলি গ্রামবাসী জানাচ্ছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতিটি গ্রামসভায় বাসিন্দাদের প্রস্তাব, অভিযোগের কথা লিখে রাখা হচ্ছে। মাসখানেক ধরে, ৬২টি পঞ্চায়েতের প্রতিটি গ্রামে গ্রামসভা হবে। বাসিন্দাদের অভাব-অভিযোগের কথা পঞ্চায়েতে স্মারকলিপি আকারে জমা দেওয়া হবে। তার পরে, পঞ্চায়েতের অপদার্থতার কথা প্রচার করা হবে।” কিন্তু কেন এমন কর্মসূচি? রাজনৈতিক মহলের একাংশের অনুমান, এর মাধ্যমে আরও বেশি করে গ্রামে পৌঁছনো ও গ্রামে নিজেদের সংগঠনের পরিস্থিতি কেমন, তা বোঝাটা উদ্দেশ্য হতে পারে সিপিএমের। বিষয়টি স্বীকার করেননি সিপিএম নেতৃত্ব। তবে দলের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “গ্রামসভা নিয়ে মানুষের আগ্রহ রয়েছে, তাই এমন আয়োজন। মানুষ আসছেনও আমাদের কর্মসূচিতে। আমাদের তাঁরা নিবিড় ভাবে অভাব-অভিযোগের কথা জানাচ্ছেন। প্রমাণ হচ্ছে, তৃণমূল পঞ্চায়েত স্তরে কতটা ব্যর্থ।”
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন। তাঁর সংযোজন: “সিপিএমকে গ্রামের মানুষ আর বিশ্বাস করেন না, সেটা প্রতিটি নির্বাচনেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ফলে, ওঁরা কী করলেন, তা ভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না।” বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দিলীপ দে’রও বক্তব্য, “রাজ্যে বিরোধী শক্তি হিসেবে সিপিএমকে আর মানুষ ভরসা করে না। ওঁরা টিকে থাকার জন্য নানা কিছু করতেই পারেন। কিন্তু সে ভরসা আর ফিরে পাবেন না।”