লুৎফান্নেসা খাতুন। নিজস্ব চিত্র
মাইকে করে তাঁদের জমিতে চাষ ‘বন্ধের’ নিদান দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতারা। এমনকি, অন্য কেউ ওই জমিতে চাষ করলে জরিমানা করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। এ বার বাড়িতে থাকা কয়েক বস্তা ধান বিক্রি করতে ফের তৃণমূলের ওই নেতা-কর্মীরা বাধা দিয়েছে বলে বুধবার মন্তেশ্বরের বিডিও-র কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন স্থানীয় তাজপুরের বাসিন্দা লুৎফান্নেসা খাতুন। মঙ্গলবার মন্তেশ্বর থানায় এ ব্যাপারে জেনারেল ডায়েরিও করেছেন ওই তরুণী। নিজেকে বিজেপির সক্রিয় কর্মী দাবি করে তাঁর অভিযোগ, ‘‘বিজেপি পার্টির সদস্য অভিযানে যোগ দেওয়ার জন্য তৃণমূল পার্টির লোকজন আমাকে ও আমার বাড়ির লোককে ক্রমাগত ভয় ও হুমকি দেখাচ্ছে।’’
যদিও অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। ওই এলাকার তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য স্বপন ঘোষের দাবি, “বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েতে আলোচনা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে দেখুন, পুরোটাই পারিবারিক বিবাদ। এর মধ্যে কোনও রাজনৈতিক রং নেই। আমরা চাষ বন্ধ, ধান বিক্রি বন্ধ, এ সব রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই।’’ মন্তেশ্বরের বিডিও বিপ্লব দত্ত বলেন, “এখনও অভিযোগ দেখিনি। অভিযোগ পেলেই খতিয়ে দেখা হবে।’’
ভাগড়া-মূলগ্রাম পঞ্চায়েতের তাজপুর গ্রামের লুৎফান্নেসা খাতুন লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, তাঁদের সামান্য কয়েক বিঘা জমি রয়েছে। বিজেপি করার ‘অপরাধে’ তাতে চাষ বন্ধ করার নিদান দিয়েছে ওই তৃণমূল নেতারা। তাঁর দাবি, ‘মাইক বাজিয়ে গোটা গ্রামকে শোনানো হয়, আমাদের জমিতে যে চাষের কাজে যাবে বা যে ব্যক্তি ট্রাক্টর ভাড়া দেবে তাঁদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হবে’। ওই চিঠির শেষ অংশে তিনি দাবি করেছেন, ‘কুসুমগ্রামের এক ব্যক্তি চাষের কাজে ট্রাক্টর ভাড়া দিতে রাজি হয়েছিলেন। বুধবার দিনই কুসুমগ্রামের তৃণমূলের পার্টি অফিসে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে চাষ বন্ধের হুমকি দেওয়া হয়েছে’।
ওই মহিলা জানান, বাড়িতে বেশ কয়েক বস্তা ধান পড়ে রয়েছে। বৃষ্টিতে ভিজলে ধান নষ্টের সম্ভাবনা রয়েছে। আবার চাষের খরচ তোলার জন্যও ওই ধান বিক্রি করার প্রয়োজন। সে জন্যে সোমবার ‘ফড়ে’দের ডেকেছিলেন তিনি। অভিযোগ, ধান ওজন করার পরে ট্রাক্টরে তোলার সময় তৃণমূলের লোকেরা এসে বাধা দেয়। মাঝ উঠোনে ওই অবস্থায় ধানের বস্তা পড়ে রয়েছে। লুৎফান্নেসা বলেন, “পেটে তো মারছেই আবার পিঠেও মারছে। আমার দাদা মানসিক ভারসাম্যহীন। রাস্তাঘাটে তাঁকে মারধর করা হচ্ছে। বাড়িতে, রাস্তায় বাড়ির লোকেদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’’
বিজেপির সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য কমিটির সদস্য গোলাম জার্জিসের কথায়, “এক সময় সিপিএম এ রকম করত। ফলে সিপিএমের বিদায় হয়েছিল। তৃণমূলও সিপিএমের চটিতে পা গলিয়ে অত্যাচার করছে। তার মানে তৃণমূলও বুঝে গিয়েছে, বিদায় ঘন্টা বেজে গিয়েছে।’’ মন্তেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক সৈকত পাঁজা বলেন, “কি ঘটেছে জানার চেষ্টা করছি।’’