Asansol

কয়লাঞ্চলে ফের সবুজ-ঝড় তিন কারণেই সাফল্য, দাবি শাসক দলের

গত লোকসভা ভোটে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপি এগিয়েছিল ৯০টি ওয়ার্ডে। তৃণমূল এগিয়েছিল ১৬টি-তে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:৩৬
Share:

ফাইল ছবি।

গত বার ৭৪, এ বার ৯১— ওয়ার্ড-প্রাপ্তির স্কোরকার্ডই বলে দিচ্ছে, আসানসোল পুরভোটে সবুজ-সাফল্যের কথা। তবে ভোটগ্রহণের আগে বিদায়ী পুর-বোর্ডে ৯৩টি ওয়ার্ড ছিল তৃণমূলের। তবে গত লোকসভা ভোটে ভোটপ্রাপ্তির নিরিখে বিজেপি এগিয়েছিল ৯০টি ওয়ার্ডে। তৃণমূল এগিয়েছিল ১৬টি-তে। বিধানসভা ভোটে ওয়ার্ডভিত্তিক ফলেও বিজেপি এগিয়ে ছিল ৬০টিতে, তৃণমূল সেখানে ৪৬টি। তার পরেও, কী ভাবে তৃণমূলের এমন সাফল্য তা নিয়ে শহর জুড়ে শুরু হয়েছে কাটা-ছেঁড়া।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার শুরু থেকেই কয়েকটি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল— প্রথমত, বিধানসভা ভিত্তিতে ওয়ার্ডগুলির দলীয় প্রার্থীদের নিয়ে কর্মিসভা। দ্বিতীয়ত, ‘কোন্দলে’ রাশ টানা। এই সূত্রেই আসানসোল উত্তর বিধানসভার ৩২টি ওয়ার্ড দিয়ে কর্মিসভা করা শুরু হয়। পরে, বাকি বিধানসভা এলাকাগুলিতে তা করা হয়। কর্মিসভাগুলির আয়োজনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয়, সংশ্লিষ্ট বিধানসভার দলীয় বিধায়ককে, অথবা যেখানে বিধায়ক নেই, সেখানকার বিধানসভা ভোটের প্রার্থীকে। ওই সভাগুলি থেকে বার বার জোর দেওয়া হয়েছিল, সকলকে এক সঙ্গে লড়ার জন্য।

পাশাপাশি, জেলার রাজনীতির সঙ্গে পরিচিতদের একাংশের মতে, তৃণমূলের জন্য এ বার অন্যতম ‘কোন্দল-কাঁটা’র উদাহরণ ছিলেন, নির্দলেরা। এই নির্দলদের মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য নাম ছিলেন পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তবস্‌সুম আরা, পরিচিত যুব তৃণমূলের নেতা পল্টু দাস প্রমুখ। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়েও কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছিল, তৃণমূলের তরফে। যদিও ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড থেকে রাধা সিংহ, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে নাদিম আখতার নামে দুই ‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূল’ নির্দল হিসাবে জিতেছেন। রাজ্যের মন্ত্রী মলয় ঘটক থেকে দলের জেলা সভাপতি বিধান উপাধ্যায়— এক সুরে জানিয়েছিলেন, নির্দলেরা ভোটে জিতলেও, তাঁদের আর দলে নেওয়া হবে না। সে ‘ওষুধে’ কাজ হয়েছে, মনে করছেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের একাংশের মধ্যে। পাশাপাশি, দলীয় নেতৃত্বের তরফে ‘দুয়ারে সরকার’, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর মতো রাজ্য সরকারের প্রকল্পগুলির কথা প্রচারে জোর দিতে বলা হয়েছিল। একেবারে স্থানীয় স্তরে দলের নেতা-কর্মীরা তা সাফল্যের সঙ্গেই করেছেন বলে পর্যবেক্ষণ তৃণমূল নেতৃত্বের।

Advertisement

কার্যত সামগ্রিক ভাবে এই ‘ত্রিফলা তত্ত্ব’-এ স্বীকৃতি দিচ্ছেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। দলের জেলা সভাপতি বিধান বলেন, “কর্মিসভায় জোর দেওয়া হয়েছিল। দলে কোনও কোন্দল নেই। কোথাও, কারও ক্ষোভ-বিক্ষোভ থাকলে, দলের মধ্যেই তা মেটাতে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সাংগঠনিক ভাবে সব কিছুই ঠিক হওয়াতে আজকের সাফল্য।” জয়ের শংসাপত্র নিয়ে তৃণমূল প্রার্থী অভিজিৎ ঘটকের দাবি, “রাজ্যের প্রকল্পগুলির সুফল এবং পুরসভার দ্বারা সেগুলির ঠিক মতো রূপায়ণ হওয়ায় মানুষ আমাদের ভরসা করেছেন।”

ভোট-গণনার পরে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূলে ‘ইন্দ্রপতন’ কার্যত হয়নি। বিদায়ী পুর-প্রশাসক অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়, বিদায়ী মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটকেরা জিতেছেন বিপুল ব্যবধানে। বিশেষ নজর ছিল ৭৪ নম্বর ওয়ার্ডটির দিকে। সেখানে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন কুলটির প্রাক্তন বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। জেলার রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন ছিল, উজ্জ্বল এ বার জিততে না পারলে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই প্রশ্ন উঠত। তবে তিনিও জিতেছেন। উজ্জ্বলের কথায়, “জয় বা ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও চিন্তা ছিল না। তবে প্রচারে বিশেষ জোর দিয়েছিলাম। মানুষ আশীর্বাদ করেছেন।” তবে এ দিন কুলটিতে দলের স্থানীয় নেতৃত্বের বদলও চেয়েছেন তিনি! দলের একাংশের দাবি, এ ক্ষেত্রে উজ্জ্বল আদতে ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি বিমান আচার্যের দিকে। বিমানের যদিও প্রতিক্রিয়া, “স্থানীয় নেতৃত্বে কারা থাকবেন, সেটা ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত। এ বিষয়ে কারও ব্যক্তিগত মতের কোনও গুরুত্ব নেই।”

যদিও তৃণমূলের এই জয়কে ‘লুটের জয়’ তকমা দিয়েছেন বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি দিলীপ দে, সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীরা। তাঁদের অভিযোগ, “ভোটের দিন গোটা রাজ্যের মানুষ দেখেছেন, কী ভাবে বহিরাগত দুষ্কৃতীদের এনে একের পরে এক বুথ লুট করেছে তৃণমূল। সুতরাং, এ ফল হবে জানা কথাই।” যদিও বিরোধীদের এই তোপকে আমল দিচ্ছেন না তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “বিরোধীরা ভোটের আগে থেকেই হেরে বসে আছেন। তাই নানা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছেন। তবে মানুষ তাতে বিভ্রান্ত না হয়ে আমাদের সঙ্গেই যে রয়েছেন, এ দিনের ফলে
সেটাই বোঝা গেল।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement