ঘরে বসে মাস্ক বানাচ্ছেন ইতু দেবনাথ। নিজস্ব চিত্র
রান্নাবান্না বা ঘরের কাজের মধ্যে খানিক ফাঁক পেলেই গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছেন দরজার সামনে। পথ আটকাচ্ছেন মুখ আঢাকা রেখে কোনও পথচারীকে যেতে দেখলেই। মুখে রুমাল বেঁধে বা আঁচল চাপা দিয়ে যাওয়া মানুষজনও ছাড় পাচ্ছেন না। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বাড়ির বাইরে বেরোলে ‘মাস্ক’ পরা আবশ্যক করেছে প্রশাসন, এই বার্তা দেওয়ার সঙ্গে ওই পথচারীদের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন নিজের তৈরি একটি ‘মাস্ক’। কাটোয়া শহরের আদর্শপল্লির বাসিন্দা ইতু দেবনাথ করোনা-যুদ্ধে শামিল হয়েছেন এ ভাবেই। বিনামূল্যে ‘মাস্ক’ হাতে পেয়ে খুশি হচ্ছেন পথচারীদের অনেকেই। কেউ-কেউ আবার পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য আরও দু’-একটি চেয়ে নিচ্ছেন।
বছর পঞ্চাশের ইতুদেবী জানান, সংসারে অভাব রয়েছে ঠিকই। তবে তার মধ্যেই স্বামীর সহযোগিতায় এই কাজ করছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, সকলেই করোনা সংক্রমণ রুখতে স্বাস্থ্য-সচেতন হতে বলছেন। ‘মাস্ক’ ব্যবহার করা আবশ্যিক হয়ে উঠেছে। তাই সাধ্যমতো আমার এই উদ্যোগ।’’
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ইতুদেবীর স্বামী বাদল দেবনাথ ছোটখাট ব্যবসা করতেন। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। সংসারের অভাব দূর করতে প্রায় ২৭ বছর আগে ইতুদেবী বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। কিছু দিনের মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে মেয়েদের নানা জামাকাপড় তৈরি করাও শুরু করেন। তিনি জানান, মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ‘লকডাউন’-এর জেরে একমাত্র ছেলে ভিন্ রাজ্যে পড়াশোনা করতে গিয়ে আটকে রয়েছেন। স্বামীর রোজগারও এখন বন্ধ। রেশনে পাওয়া খাদ্যসামগ্রীতে নিজেদের কোনও মতে চলে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে মনের অবস্থা ভাল না হলেও ‘মাস্ক’ বিলি চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
ইতুদেবী বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সেলাইয়ের কাজ করার সুবাদে বাড়িতে প্রচুর টুকরো কাপড় ছিল। আমরা গরিব মানুষ। চাল-ডাল কিনে বা টাকা দিয়ে কাউকে সাহায্য করার ক্ষমতা নেই। তাই সুতির কাপড় দিয়ে ‘মাস্ক’ তৈরি করে পাড়া-প্রতিবেশী থেকে পথচারীদের বিনামূল্যে দিচ্ছি। তাতে কিছুটা হলেও মানসিক শান্তি পাচ্ছি।’’ তাঁর স্বামী বাদলবাবু বলেন, ‘‘এখন ‘মাস্ক’-এর চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। চড়া দামে তা বিক্রি হচ্ছে। আমাদের মতো অনেক গরিব মানুষ রয়েছেন, তাঁদের পক্ষে তো সেই ‘মাস্ক’ জোগাড় করা মুশকিল। তাই স্ত্রীর এই কাজে যতটা সম্ভব সাহায্য করছি।’’
স্থানীয় বাসিন্দা দীপক সেন, বাপি বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বলেন, ‘‘নাকে রুমাল বেঁধে যাওয়ার সময়ে ইতুদেবী ডেকে আমাদের ‘মাস্ক’ দিয়েছেন। বাড়ির লোকজনের জন্যও কয়েকটি দিয়েছেন। খুব সুবিধা হয়েছে।’’