জৈষ্ঠ্যের প্রথম সপ্তাহ। ‘প্রখর দারুণ অতি’ তপ্ত দিন। গরমের ঠেলায় প্রাণ ওষ্ঠাগত বর্ধমানবাসীর। বেলা বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বইছে শুকনো গরম হাওয়া। বেলা গড়াতেই ফাঁকা রাস্তাঘাট। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, এই মুহূর্তে জেলার তাপমাত্রা ঘুরছে ৪০-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে।
এমন গরম মাথায় নিয়েও রুটি-রুজির টানে পথে বেরোতে হচ্ছে মানুষকে। কিন্তু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বেলা ১১টার পরে থেকেই রাস্তায় লোক কমে যাচ্ছে। বিকেল ৫টার আগে রাস্তায় সে ভাবে লোকজন বাইরে বেরোচ্ছেন না। গরমের জের পড়ছে ব্যবসাতেও। জেলা বাস ব্যবসায়ী সমিতির কর্তা তুষার ঘোষ বলেন, “দুপুরের দিকে মোটে পাঁচ-দশ জন যাত্রী নিয়ে বাস ছুটছে।’’
রবিবার বেলা ১০টা। দোকানপাট খোলা। কিন্তু বর্ধমান শহর কার্যত খাঁ খাঁ করছে। মোড়ে মোড়ে আড্ডা নেই। বন্ধ চায়ের দোকানের ঝাঁপও। যে ক’জনকে রাস্তায় দেখা যাচ্ছে, তাঁদের বেশির ভাগই সুতির কাপড়ে মুখ ঢেকে, চোখে রোদ-চশমা পরে বেরিয়েছেন। দেখা মিলছে ছাতা, টুপিরও। এর পরেও রোদ-মাথায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বলে শহরবাসী জানান। তাঁদের দাবি, ‘হিট স্ট্রোকে’ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। তীব্র মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, শ্বাসকষ্ট, হাত-পা কাঁপার মতো নানা সমস্যা হচ্ছে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, ‘হিট স্ট্রোক’ থেকে বাঁচতে বেলা ১১টার মধ্যে সকালের কাজ গুটিয়ে ফেলতে হবে। বিকেলের আগে আর বেরনো নয়। যাঁদের বাড়ির বাইরে বেরোতেই হবে, তাঁদের ছাতা, টুপি, রোদ চশমা অবশ্যই ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তারেরা। তাঁরা জানান, দুপুরে মোটরবাইক চালালে শরীরে অনেক বেশি গরম হাওয়া লাগে। ফলে শরীরে জলের পরিমাণ কমে যায়। এই মোটরবাইক আরোহীদের মুখ ঢেকে বেরনোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
এ ছাড়া, বেশি করে জল পান করা এবং পটাশিয়াম, সোডিয়ামের ঘাটতি থেকে বাঁচতে দিনে অন্তত দু’বার মিছরি-নুন-লেবুর জল পান, পাতে শশা, টক দই রাখার নিদান দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বর্ধমান থেকে মেমারির নানা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, টক দইয়ের বিক্রিও অনেকটাই বেড়েছে। মেমারির চকদিঘির একটি মিষ্টির দোকানের মালিক জানান, প্রতি দিন ২৫০ কিলোগ্রাম দই বিক্রি করছেন। একটি সংস্থার কর্তা জানাচ্ছেন, টক দইয়ের চাহিদা এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে জোগানে টান পড়ছে। চিকিৎসকেরা আরও জানাচ্ছেন, রোদে বেরোলে সাদা রঙের সুতির ঢিলেঢালা পোশাক পরা উচিত। যতটা সম্ভব গা ঢাকা থাকতে হবে।
গরমে বিশেষ নজর দেওয়া দরকার শিশুদের প্রতি, জানান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অশোক দত্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এই সময় শিশুদের বেশি করে জল খাওয়াতে হবে। জাঙ্ক বা ফাস্ট ফুড দেওয়া বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের লিফ্ট ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত।’’ চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এই সময়ে ‘সানস্ক্রিন’ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে বাজারচলতি ‘সানস্ক্রিন’গুলি তেমন উপযুক্ত নয়।’’
এই গরমে ‘কষ্টে’ রয়েছে রমনাবাগানের জীবজন্তুরাও। সেগুলির জন্যে ফ্যান দেওয়া হয়েছে। মাঝেমধ্যে ঠান্ডা জলে শরীর ভিজিয়ে দেওয়া হচ্ছে। খাওয়ানো হচ্ছে তরমুজের রস, ওআরএস। ছায়ার খোঁজে গাছের তলায় ছুটছে হরিণের দলও!