(বাঁ দিক থেকে) অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, নেহা রুইদাস, রূপালী পাল। নিজস্ব চিত্র
নেহা, অনন্যা, রূপালী— তিন জনই এক সুতোয় বাঁধা। কারও ইচ্ছা শিক্ষকতা করা। কেউ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করে নিজের ও পরিবারের ভবিষ্যৎ পাল্টাতে চায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে অনটন।
কাঁকসার মলানদিঘি দুর্গাদাস বিদ্যামন্দিরের ছাত্রী নেহা এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৪২৫ নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। কুলডিহার রুইদাসপাড়ার বাসিন্দা হৃদয় রুইদাসের চার মেয়ের মধ্যে বড় নেহা। ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হতে চায় সে। সে জানায়, স্কুলের শিক্ষক থেকে এলাকার বহু মানুষই তার পড়াশোনার জন্য নানা ভাবে সাহায্য করেছেন। ভাগচাষি হৃদয়বাবু বলেন, ‘‘কষ্ট করেই এতদূর পড়াশোনা চালিয়েছি। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না। নেহা বলে, ‘‘পরিবারের সমস্যা থাকলেও বাবা কোনও সময়ই কিছু বুঝতে দেননি। সব সময়ই এগিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়েছেন।’’
কাঁকসার বনকাটি পঞ্চায়েতের অযোধ্যা গ্রামের বাসিন্দা অনন্যা চট্টোপাধ্যায় অযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৪৮ নম্বর পেয়েছে। ভূগোল বা সংস্কৃত নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করাও ইচ্ছে তার। অনন্যার বাবা শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে অস্থায়ী কাজ করেন। কখনও কাজ পান, আবার কখনও বাড়িতে বসে থাকতে হয়। তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে অনন্যা বড়। শুভেন্দুবাবু বলেন, ‘‘শত বাধা পেরিয়ে মেয়ে ভালো ফল করায় খুশি হয়েছি। পাশাপাশি, ভবিষ্যৎ নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে। মেয়ে যাতে ভাল কিছু করতে পারে, সে জন্য সব রকম ভাবে চেষ্টা করে যাবে।’’
অন্য দিকে, আউশগ্রাম ২ ব্লকের অমরপুর গ্রামের বাসিন্দা রূপালী পাল এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৬০৬ নম্বর পেয়ে পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে। অভাবকে নিত্যসঙ্গী করে বড় হওয়া আদুরিয়া দিবাকর উচ্চ বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে চায়। তারা বাবা সুকুমার পাল দিনমজুরের কাজ করেন। ভাল ফল করে দিনআনা, দিনখাওয়া পরিবারে রূপালী খুশির আলো ফোটালেও কপালে চিন্তার ভাঁজ সুকুমারবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘দুই মেয়ের মধ্যে রূপালী বড়। মেয়ে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে চায়। খরচ বেশি হলেও তার স্বপ্নপূরণ করতে হবে।’’