এই ট্রেন নিয়ে শহরে চর্চা শুরু হয় বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র
ডিপিএলের ইয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিল একটি ঝাঁ চকচকে ট্রেন। অন্য দিন যেখানে শুধুই মালগাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে, সেখানে আজ হঠাৎ নতুন ট্রেন কেন? এই প্রশ্ন থেকেই বৃহস্পতিবার সকালে শহর জুড়ে ছড়াতে শুরু করে গুঞ্জন। দীর্ঘদিনের দাবি মেনে কি অবশেষে দুর্গাপুর-হাওড়া ট্রেন চালু করার সিদ্ধান্ত নিলেন রেল কর্তৃপক্ষ— কৌতূহল তৈরি হয় বাসিন্দাদের মধ্যে। যদিও রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি তা নয়। দুর্গাপুর-হাওড়া ট্রেন চালুর সম্ভাবনাও এখন নেই। তা জানার পরে ফের হতাশ শহরের নিত্যযাত্রীরা।
দুর্গাপুর থেকে সরাসরি হাওড়ার ট্রেন চালুর দাবি অনেক দিনের। রেল সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুর থেকে মাসে গড়ে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কলকাতায় যান। কিন্তু দুর্গাপুর থেকে হাওড়ার লোকাল ট্রেন না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় তাঁদের। আসানসোল বা পুরুলিয়া থেকে আসা লোকাল ট্রেনগুলি বর্ধমান পর্যন্ত চলে। বর্ধমান থেকে অন্য ট্রেন ধরে হাওড়া যেতে হয়। সরাসরি হাওড়া যেতে বেশি ভাড়া দিয়ে মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেনে চড়া ছাড়া গতি নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনগুলি দূর থেকে আসায় আগেই যাত্রীতে বোঝাই হয়ে আসে। অধিকাংশ ট্রেনে দুর্গাপুরে বসার জায়গা মেলে না।
২০০৭ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী লালুপ্রসাদ যাদব দুর্গাপুরে রেল উড়ালপুলের শিলান্যাসে এলে তাঁর কাছে দুর্গাপুর-হাওড়া লোকাল ট্রেনের দাবি জানান যাত্রীরা। মন্ত্রী পদক্ষেপের আশ্বাস দেন। পরে রেলের তরফে জানানো হয়, দুর্গাপুরে ইয়ার্ড নেই। স্টেশন থেকে কয়েক কিলোমিটিরা দূরে কয়লা পরিবহণের মালগাড়ির জন্য ডিপিএলের ইয়ার্ড রয়েছে। লোকাল ট্রেন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সেই ইয়ার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। ২০০৮ সালে তৎকালীন রেলওয়ে স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান বাসুদেব আচারিয়া জানান, দুর্গাপুরে টার্মিনাল না থাকায় ঠিক হয়েছে, ট্রেনগুলি আসানসোল থেকে দুর্গাপুরে ফাঁকা আসবে। দুর্গাপুর থেকে যাত্রী নিয়ে হাওড়া যাবে। কিন্তু শেষমেশ ২০১৭ সালে রেল মন্ত্রক জানিয়ে দেয়, দুর্গাপুর-হাওড়া ট্রেন পরিষেবা চালুর বিষয়টি লাভজনক নয় বলে মনে করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার লাল ও ইস্পাত রঙের কামরার একটি ট্রেনকে হঠাৎ ডিপিএলের ইয়ার্ডে আসতে দেখে অনেকে আশার আলো দেখতে শুরু করেন। সুকুমার অধিকারী, রাজা মুখোপাধ্যায়, বিপদতারণ বাউড়িরা প্রশ্ন করেন, ‘‘তবে কি রেল মন্ত্রক সিদ্ধান্ত পাল্টাল? হাওড়া পর্যন্ত ট্রেন চালুর জন্যই কি পরীক্ষামূলক ভাবে এই ট্রেন চালানো হচ্ছে?’’ শুরু হয়ে যায় চর্চা।
যদিও পরে রেল সূত্রে জানা যায়, সে রকম কোনও সম্ভাবনা নেই। ওই ট্রেনটি অন্য ডিভিশনে পাঠানো হবে। তার আগে সাময়িক ভাবে সেটি ডিপিএলের ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে, জানান রেলের আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক রাহুল রঞ্জন।