প্রতীকী ছবি।
ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে ‘কাটমানি’র অভিযোগের তদন্ত করবে সংশ্লিষ্ট থানাও, জামালপুরের ঘটনায় সিদ্ধান্ত নিল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। শম্ভুপুরে আবাস যোজনার ঘর দেওয়ার নাম করে একাধিক উপভোক্তার কাছ থেকে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগে পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বিডিও (জামালপুর) শুভঙ্কর মজুমদার। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘পুলিশকে সবিস্তারে তদন্ত করতে বলার পাশাপাশি, পঞ্চায়েতকেও রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব বর্ধমানে সরকারি প্রকল্পে ৫৯ হাজারেরও বেশি বাড়ি হচ্ছে। প্রত্যেক উপভোক্তা প্রথম কিস্তির ৬০ হাজার টাকা পেয়ে গিয়েছেন। তার পরে বিভিন্ন ব্লক থেকে ‘কাটমানি’র অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। জামালপুরের শম্ভুপুর গ্রামের কয়েকজন উপভোক্তা সরাসরি তৃণমূলের তিন কর্মীর নামে ‘কাটমানি’ নেওয়ার অভিযোগ করেছেন বিডিও-র কাছে। পাঁচ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। গত বছরের মতো ফের এ বার জেলায় ‘কাটমানি’র অভিযোগ উঠতে শুরু করায় ব্লক ও পঞ্চায়েত স্তরে নিয়মমাফিক তদন্ত ছাড়াও সংশ্লিষ্ট থানাকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে বিডিও-র কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, ‘‘অভিযোগের ভিত্তিতে সত্যতা মিললে কাউকে ছাড়া হবে না। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম নিয়োগী বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগ ফৌজদারি অপরাধ। সে জন্য পুলিশকে দিয়ে তদন্ত করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রের দাবি, উপভোক্তাদের বারবার ‘কাটমানি’ না দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। প্রচার করা হচ্ছে, আবাস যোজনার জন্য সরকার যে টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠাচ্ছে, সেখান থেকে কাউকে কোনও টাকা দেবেন না। তার পরেও উপভোক্তাদের একাংশ নানা সময়ে ‘কাটমানি’ দিয়ে ফেলছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘হুমকি’র মুখে পড়ে তাঁরা মাথা নত করছেন বলে মনে করছে প্রশাসন। আবাস যোজনা প্রকল্পের অনেক উপভোক্তার দাবি, ‘কাটমানি’ না দিলে পরবর্তী কিস্তির টাকা আসবে না, এমন ‘হুঁশিয়ারি’ দিয়ে শাসক দলের কর্মীরা টাকা নিচ্ছেন।
ফের ‘কাটমানি’র অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছেন জেলা তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এ বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। অভিযোগের সারবত্তা থাকলে প্রশাসনিক ভাবে যেমন কাউকে ছাড়া হবে না, তেমনই দলের তরফেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। শুধু অভিযুক্তেরা নয়, পঞ্চায়েত প্রধানেরাও তাঁদের দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘কাটমানি নেওয়া যেমন অপরাধ, বারবার সচেতন করার পরে কাটমানি দেওয়াও অন্যায়।’’
বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর টিপ্পনী, ‘‘সব অন্যায় আসলে তৃণমূলই করছে। কারণ, ঘর পাচ্ছেন তৃণমূলের লোকজন। তাঁদের কাছে টাকা আদায়ও করছে সেই তৃণমূলই!’’