ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি ধস নেমেছিল অণ্ডালের হরিশপুর গ্রামে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুর্গাপুরে পুনর্বাসনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। ছিলেন হরিশপুরের বাসিন্দারাও। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে অন্যত্র সাময়িক ভাবে সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বৈঠকে।
বৈঠক শেষে ইসিএলের কাজোড়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার জয়েশচন্দ্র রায় জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে আপাতত সরানোর জন্য ইসিএলের ১০টি ফাঁকা কোয়ার্টার চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রয়োজন মতো আরও কোয়ার্টার তৈরি রাখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘ফের ধসের ঘটনা ঘটলে যাতে দ্রুত মানুষজনকে সাময়িক ভাবে সরিয়ে নেওয়া যায়, সে জন্য ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বেশ কিছু কোয়ার্টার দখল হয়ে গিয়েছে। সেগুলি ফাঁকা করতে পুলিশের সহযোগিতা দরকার।’’ ‘রানিগঞ্জ মাস্টার প্ল্যান’-এর নোডাল আধিকারিক সৈকত চক্রবর্তী জানান, পুনর্বাসন হল একমাত্র স্থায়ী সমাধান। তবে আপাতত দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। হরিশপুর গ্রামের তিন-চারটি পরিবারকে ইতিমধ্যেই সরিয়ে ফেলা হয়েছে ইসিএলের কোয়ার্টারে।
বৈঠকের পৌরোহিত্য করেন মহকুমাশাসক (দুর্গাপুর) অনির্বাণ কোলে। তিনি জানান, পুলিশ, প্রশাসন, এডিডিএ, ইসিএল, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, গ্রামবাসীর তরফে প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সব সময়ের জন্য উদ্ধারকারী দল তৈরি রাখার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রশাসনের তরফে বিপর্যয় মোকাবিলা দল এবং স্থানীয় পুলিশ সহযোগিতা করবে। তিনি বলেন, ‘‘কোনও ধসের ঘটনা ঘটলে দ্রুত যাতে ‘টিম’ গিয়ে কাজে লেগে পড়তে পারে, সময় নষ্ট না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’’ তিনি আরও জানান, যে সব জায়গায় বার-বার ধস হচ্ছে সেখানে ইসিএলের তরফে ‘টেকনিক্যাল টিম’ গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে যাতে আগুনের ঘটনা কমে, ধস যাতে নিয়ন্ত্রিত হয়। স্থায়ী পুনর্বাসন প্রকল্প কার্যকর করে তোলার আগে এর ফলে হাতে সময় পাওয়া যাবে। মহকুমাশাসক জানান, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরিয়ে ফেলা এবং পুনর্বাসন প্রকল্পের কাজকর্ম কেমন এগোচ্ছে তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসন, ইসিএল, ভূমি দফতর, স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, গ্রামবাসীদের নিয়ে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মাসে দু’বার করে বৈঠক করবে ওই কমিটি। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে তাঁকে, জানান বিডিও (অণ্ডাল) ঋত্বিক হাজরা।
গ্রামবাসীর দাবি, প্রায় সাড়ে পাঁচশো পরিবারকে সরাতে হবে। মহকুমাশাসক জানান, এডিডিএ একটি সমীক্ষা করেছে। তা প্রকাশ হলে তালিকায় কোনও সংযোজন বা বিয়োজন করতে হবে কি না, সেটা দেখা হবে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে পুনর্বাসন প্যাকেজ পরিবারগুলির হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা সম্পূর্ণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুনর্বাসন প্রকল্প রূপায়ণে দেরি কেন? ‘রানিগঞ্জ মাস্টার প্ল্যান’-এর নোডাল আধিকারিক সৈকতবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘পুনর্বাসনের জন্য নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। রাজ্য সরকারের আবাসন দফতর থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৮,৭০৪ ফ্ল্যাট তৈরির কাজ চলছে।’’ ইসিএলের কাজোড়া এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার বলেন, ‘‘রানিগঞ্জ মাস্টার প্ল্যান রূপায়ণের দায়িত্ব এডিডিএ-র। ইসিএলের যা করণীয় ছিল তা যথা সময়ে করে দেওয়া হয়েছে।’’
এ দিকে, বৈঠকে যোগ দেওয়া গ্রামবাসী তপন পাল জানান, আতঙ্কে ইতিমধ্যেই ১৫টি পরিবার অন্যত্র আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘২০১২-য় এডিডিএ বাসিন্দাদের সচিত্র পরিচয়পত্র দিলেও প্রতিকার মেলেনি। দু’দশক ধরে পুনর্বাসনের গল্প শুনছি। কবে যে ধসে তলিয়ে যাব আমরা জানি না! এখনও পাঁচ মাস সময় লাগবে বলে শুনছি। বৈঠক নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট নই।’’ স্থানীয় বাসিন্দা সুনীল গোপ, নিমাই মণ্ডল, অজিত গোপ, আনন্দ চৌধুরীরা জানান, জামবাদের বাড়িশুদ্ধ তলিয়ে যাওয়ার ঘটনার পরে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে এলাকায়। তাই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এ দিন হরিশপুরে ধসপ্রবণ এলাকা পরিদর্শন করে এআইটিইউসি-র রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র সিংহও পুনর্বাসনে দেরির অভিযোগ করেন।
প্রকল্পে দেরির অভিযোগ উড়িয়ে এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এডিডিএ এক দিনও সময় নষ্ট করেনি। প্রথমে বাম আমলে করা ভৌগোলিক সমীক্ষায় গরমিল ছিল। তা নতুন করে করতে হয়। তার পরে ইসিএল জমি দেয়নি। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি কিনতে হয়। চার হাজার ফ্ল্যাট তৈরির কাজ প্রায় শেষ। বাকিগুলিও দ্রুত শেষ হবে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাম নেতৃত্ব এবং ইসিএল কর্তারা।