বর্ধমানে নাবালিকা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ, গ্রেফতার শিক্ষক। —প্রতীকী চিত্র।
ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক কোচিং সেন্টারের অঙ্কের শিক্ষককে। বর্ধমানের এই ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে। বুধবার রাতে ওই শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করানো হয়। অন্য দিকে, ওই শিক্ষককের পাশে দাঁড়িয়ে পাল্টা সরব হয়েছে পড়ুয়াদের একাংশ। তাদের দাবি, অঙ্কের স্যর এই ধরনের কাজ করতেই পারেন না। তাঁকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হচ্ছে।
বর্ধমান শহরেই থাকেন অভিযুক্ত শিক্ষক। অঙ্কের কোচিং চালান তিনি। সেখানেই পড়তে যেত কিশোরী। অভিযোগ, একাধিক বার তাকে ধর্ষণ করেছেন শিক্ষক। ভয়ে এত দিন কিশোরী বাড়িতে কাউকে সে কথা জানায়নি। বুধবার অবশেষে মা-বাবার কাছে মুখ খোলে সে। তার পরেই ঝামেলা শুরু। কিশোরীকে নিয়ে, অন্য লোকজন জড়ো করে তার বাবা-মা কোচিং সেন্টারে চড়াও হন। শিক্ষককে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। সেই সময়েই কোচিংয়ের ছাত্রছাত্রীদের একাংশ শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছিল। ফলে এলাকায় উত্তেজনা তৈরি হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বর্ধমান মহিলা থানার পুলিশ। অভিযুক্তকে রাতেই থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাঁকে আদালতে হাজির করান তদন্তকারীরা।
ধৃতকে বর্ধমান সিজেএম (মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট) আদালতে হাজির করানো হয়। তাঁকে সাত দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগকারী কিশোরী যে হেতু নাবালিকা, তাই এই মামলা পকসো আদালতে বিচারাধীন বলে জানায় আদালত। ধৃতকে আপাতত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। আগামী ৬ নভেম্বর তাঁকে পকসো আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুলিশি হেফাজতের আবেদনের শুনানি হবে সেখানেই।
ধৃতের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর জন্যেও আবেদন জানানো হয়েছিল। তা মঞ্জুর করেছে আদালত। পাশাপাশি, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক স্টেট মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধানকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ছাত্রীর বয়স ১৬ বছর। তার বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষক তাঁর কন্যার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতেন। একাধিক বার তাকে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেখানেই কন্যাকে ধর্ষণ করা হয়েছে, দাবি তাঁর। ছাত্রীর বাবা আরও জানিয়েছেন, প্রথম বার তাঁর কন্যার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছিল গত মে মাসে। তার পর একই ঘটনা ঘটে অগস্টে। বুধবার সে কথা বাড়িতে জানায় কিশোরী। সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে, দাবি তার বাবার।
বিষয়টি জানতে পেরে বুধবার বিকেলে লোকজন নিয়ে কোচিং সেন্টারে যান ছাত্রীর বাবা। তবে ওই কোচিং সেন্টারের কিছু ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকেরা শিক্ষকের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় শিক্ষককে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। রাতে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শিক্ষককে থানায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেও হাজির হন ওই পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকেরা। শিক্ষককে মুক্তি দিতে হবে বলে দাবি করেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার আদালতেও অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। তাঁরা জানিয়েছেন, আইনি লড়াইয়ে শিক্ষকের পাশে থাকবেন।