প্রতীকী ছবি
১ জুন থেকে যাত্রীবাহী বাস চলাচলের সরকরি নির্দেশ জারি করা হলেও পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোল মহকুমায় এখনও অনিশ্চিত বাস চলাচল। কারণ, বাস ও মিনিবাস মালিকদের দাবি, ভাড়া না বাড়ালে তাঁরা রাস্তায় বাস নামাবেন না। অন্য দিকে, জেলা প্রশাসনের সাফ কথা, অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়াতেই বাস চালাতে হবে। এই টানাপড়েনের জেরে সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ যাত্রী ও বাসের শ্রমিক-কর্মীরা। তৃণমূল প্রভাবিত ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স’ ইউনিয়ন’-এর নেতা রাজু অহলুওয়ালিয়ার দাবি, বাস মালিকেরা অবিলম্বে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে সমাধান সূত্র বার করুন।
‘জনতা কার্ফু’ ও ‘লকডাউন’ শুরু থেকে আসানসোল মহকুমায় বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ আছে। এখনও পর্যন্ত প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ মে শেষ হচ্ছে চতুর্থ পর্বের ‘লকডাউন’। এরই মধ্যে ২১ মে থেকে খুলে গিয়েছে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ক্ষুদ্র মাঝারি শিল্প কারখানা। শ্রমিক-কর্মীরা কাজেও যোগ দিয়েছেন। তবে গণ-পরিবহণ চালু না হওয়ায়, কর্মস্থলে যাতায়াত করতে সমস্যায় পড়ছেন তাঁরা। এই অবস্থায় হেঁটে বা চড়া ভাড়া গুণে অটো, টোটোয় চেপে কাজের জায়গায় যেতে হচ্ছেন তাঁরা। স্বভাবতই বাস চলাচলের নির্দেশিকা জারি হওয়ায় খুশি হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মালিকেরা পুরনো ভাড়ায় বাস চালাতে আগ্রহ না দেখানোয় সমস্যা তৈরি হয়েছে।
আসানসোল মহকুমার বাস ও মিনিবাস মালিকেরা জানিয়েছেন, ভাড়া না বাড়লে বাস চালানো সম্ভবই নয়। এই প্রসঙ্গে বাস অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ বিজন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সরকারি নির্দেশে ২০ জনের বেশি যাত্রী তোলা যাবে না। আবার পুরনো ভাড়াই নিতে হবে। এতে ক্ষতি পোষানো মুশকিল। তাই বাস মালিকেরা রাস্তায় বাস নামাতে চাইছেন না।’’ একই মন্তব্য ‘আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক সুদীপ রায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘১৪ জনের বেশি যাত্রী তুলতে পারব না। পুরনো ভাড়ায় এত কম যাত্রী নিয়ে লাভের মুখ দেখব কী করে? এর চেয়ে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকাই ভাল।’’ সুদীপবাবুর অভিযোগ, গত বছর লোকসভা ভোটে সরকার তিনশোর বেশি মিনিবাস ভাড়া করেছিল। ওই ভাড়া আজও মেটানো হয়নি। এই অবস্থায় তাঁরা আর ক্ষতি রাস্তায় হাঁটতে চান না।
সুদীপবাবুর প্রস্তাব, ন্যূনতম দূরত্বের ভাড়া-সহ স্তর পিছু ভাড়ার পরিমাণ সামান্য বাড়িয়ে দিলেই তাঁরা পথে বাস নামাতে পারেন। কিন্তু এই প্রস্তাবে রাজি নন জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত জেলাশাসক (পরিবহণ) প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘ভাড়া বৃদ্ধির কথা আমরা বলতেই পারব না। রাজ্য সরকার পুরনো ভাড়া নিতে বলেছে। আমরা সেই নির্দেশই বলবত রাখছি।’’
দু’পক্ষের এই টানাপোড়েনে বিপাকে পড়েছেন বাসের শ্রমিক-কর্মীরাও। তাঁরা জানান, দু’মাসের লকডাউনে রোজগার বন্ধ। কোনও ভাবে ত্রাণ নিয়ে সংসার চলছে। বাস চললে সংসারের হাল ফিরবে।