আনন্দ: মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের পরে উচ্ছ্বাস পড়ুয়াদের। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস হাইস্কুলে। নিজস্ব চিত্র
মাথার উপরে ছাদটাও নড়বড়ে অনেকের। মাস গেলে বাড়ির অবস্থাও তথৈবচ। কিন্তু এ সব পূর্ব বর্ধমানের ওই ছেলেগুলির মাধ্যমিকে ভাল ফলের ক্ষেত্রে বাধা হয়নি।
গুসকরা পুরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডে রেল লাইনের ধারে বস্তির এক কামরার ঘরে থাকে রোহিত সাউ। গুসকরা পিপি ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক দিয়ে সে পেয়েছে ৬৬৮।
রোহিতের বাবা রাজকুমার সাউ কলকাতায় একটি খাবারের দোকানে দিনমজুরি করেন। তা-ও কাজ জোটে বছরে ছ’মাস। মা ভারতী সাউ সেই সময়টা সামাল দেন সেলাই মেশিন চালিয়ে। তা দিয়েই চলে চার জনের সংসার। নুন আনতে পান্তা ফুরনোর মতো অবস্থা হলেও দিনে ১২-১৪ ঘণ্টা পড়াশোনাটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল বলে জানায় রোহিত। অবসরে মাঝেসাঝে দাবার বোর্ডে মন দিতে ভাল লাগে তার।
ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়েই পড়তে চায় রোহিত। তবে কী ভাবে পড়ার খরচ চলবে, ভেবে পান না রাজকুমারবাবু, ভারতীদেবী। তবে রোহিতের পড়াশোনা কিছুতেই বন্ধ হতে দেবেন না বলে জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রমোদরঞ্জন মণ্ডল, শিক্ষক সজল সাহারা।
কালনার মহারাজা উচ্চ বিদ্যালয়ের অরিত্র ঘোষও দারিদ্রের সঙ্গে যুঝে মাধ্যমিকে পেয়েছে ৬৫৫। তবে ছেলের আগামী দিনে পড়াশোনা কী ভাবে চলবে, তা নিয়ে সংশয়ে অরিত্রর বাবা, পেশায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক সুশান্ত ঘোষ। তাঁর দাবি, দিন গেলে হাতে আসে মোটে শ’দেড়েক টাকা। ভবিষ্যতে আইআইটি-তে পড়াশোনা করতে চায় অরিত্র। তবে ছেলের এই স্বপ্ন আদৌ সফল হবে তো, তা নিয়ে সংশয়ে সুশান্তবাবু এবং তাঁর স্ত্রী মানসীদেবী। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মসূচি ও খেলাধুলোতেও সমান ভাবে যোগ দিত অরিত্র।
ওই স্কুলেরই ছাত্র রোহিত বিশ্বাসও দারিদ্রকে জয় করে দূরন্ত ফল করেছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত ঘোষ। রোহিতের বাবা শ্যামনগর এলাকায় চায়ের একটি অস্থায়ী দোকান চালান। তবে অভাব বাধা হয়নি রোহিতের ক্ষেত্রেও। মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৩০।