ওয়ারির ‘বড়মা—নিজস্ব চিত্র।
একচালির মধ্যে আছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক এবং গণেশ। সন্ধেয় নিত্যপুজোর সময় মা কালীকে দেওয়া হয় মুড়ি, মুড়কি, খই। প্রত্যেক বছর কালীপুজোর দিনে চণ্ডীপাঠ হয়। এর পর মাকে সন্ধের সময় সাজানো হয়। তার পর তিথি মেনে হয় পুজো হয় পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওয়ারির ‘বড়মা’র।
কথিত আছে, এই কালীর আবির্ভাব স্বপ্নাদেশে। খণ্ডঘোষের ওয়ারি গ্রামে সরকার বাড়ির কালীপুজো বলেও পরিচিত এই পুজো। এই কালীর পুজোয় ঘট বির্সজন হয় না। বাংলায় বর্গী আক্রমণের আগে থেকে এই কালীর অর্চনা হয়ে আসছে। গ্রামের বাসিন্দা মধুসূদন চন্দ জানান, গ্রামের হতদরিদ্র সরকার পরিবারের জনৈক পূর্বপুরুষ বুধো সরকার ছোটবেলা থেকেই কালীভক্ত। মাঠে গরু চরাতে গিয়ে, গরুগুলিকে মাঠে ছেড়ে বটতলার নিচে ‘কালীপুজো খেলা’ করতেন তিনি। এই ভাবে চলতে চলতে এক দিন বট গাছের ছায়ায় বুধো ঘুমিয়ে পড়েন। সেই ঘুমন্ত অবস্থায় বড়মা স্বপ্নাদেশ দিয়ে বলেন—“আমি তোর ঘরে যেতে চাই। ওখানেই আমাকে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর আয়োজন কর।”
সেই স্বপ্নাদেশে দিয়ে কালী নাকি আরও বলেছিলেন— “এই জায়গায় আমার মন্দির ছিল। আমি রাজকন্যা। মহাশশ্মান থেকে রায়খা দিঘি অবধি এক টানা ৭৫০ বিঘা জমি সম্পত্তির মালিক আমি। কিন্তু আজ আমি ভিখারিণী। দুই মেয়ে লক্ষ্মী, সরস্বতী, দুই ছেলে কার্তিক এবং গণেশ, দুই সেবিকা জয়া-বিজয়াকে নিয়ে আমি দীর্ঘ দিন অভুক্ত। আমাকে তুই নিয়ে চল। আমি ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরে যেতে চাই। আমাকে তেল মাখিয়ে চালভাজা, মুড়ি আর চিনি দিবি।আমি তা খেয়েই সন্তুষ্ট থাকব।” এর পর ঘুম থেকে টেনে তুলতেই বুধো সরকার ‘বড়মা’ বলে কেঁদে ওঠেন। সেই থেকে বড়মা কালীপুজো শুরু হয়।
পুরোহিত তুষারকান্তি বন্দোপাধ্যায় বললেন, “এই কালী পাথরের মূর্তি। বির্সজন হয় না। ঘটও বিজয়া হয় না। কালী পুজোয় ২ দিন পুজো হয়। এছাড়া নিত্যপুজো হয়। ২ দিনের পুজোয় মোট ৫টি বলি হয়। পুজোর দিনে ৪টেএবং পর দিন ১টি বলি হয়। আগে মহিষ বলি হত। এখন তা বন্ধ। এছাড়া দুর্গাপুজোর সময় অষ্টমী ও নবমীতে কালীপুজো হয়। নিত্যসেবায় সন্ধ্যের সময় ভাজা মুড়ি, খই ও মুড়কি দিতে হয়।”