Independence Day Special

পতাকার কাহিনি বলতেন ঠাকুরদা, বলছেন নাতিও

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীশঙ্করের মৃত্যুর পরে, তাঁর সংগ্রহে থাকা পরাধীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্মরণিকা ও বইপত্র কলকাতার সীতারামদাস বৈদিক মহাবিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

সুশান্ত বণিক

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২৩ ০৫:৩৩
Share:

জাতীয় পতাকার বিবর্তনের কাহিনী। ছবি: পাপন চৌধুরী।

এ যেন এক পরম্পরার গল্প! আসানসোলের গোপালপুরের বাসিন্দা কালীশঙ্কর ভট্টাচার্যের এলাকায় পরিচিতি ছিল ‘পতাকা দাদু’ হিসেবে। স্কুলে-স্কুলে গিয়ে শোনাতেন জাতীয় পতাকার বিবর্তনের কাহিনি। কালীশঙ্কর প্রয়াত হয়েছেন। কিন্তু ঠাকুরদার জুতোয় পা গলিয়েছেন নাতি, বছর ১৮-র দেবাঞ্জন। তিনিও বাড়িতে কেউ এলেই নানা ধরনের পতাকা দেখান, বলেন পতাকার গল্প।

Advertisement

পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের প্রাক্তন কর্মী কালীশঙ্করের এই আগ্রহের সূত্রপাত পরিবার থেকেই। বাবা নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য। ছোট থেকেই তাই বিপ্লবীদের সংস্পর্শে এসেছিলেন। নিজেও বিপ্লবীদের বার্তা পৌঁছে দিতেন। যোগ দিতেন স্বদেশি সংগঠনগুলির বিভিন্ন কর্মসূচিতে। সে সময়ে অধিবেশনগুলিতে নানা ধরনের পতাকা উড়তে দেখেন। তা থেকেই নানা সময়ের পতাকা সংগ্রহের নেশাটা মাথায় চাপে।

তাঁর সংগ্রহটিও তাক লাগানো— উনিশ শতকের শেষ পর্বে কংগ্রেস অধিবেশনে শ্রীশচন্দ্র বসুর তৈরি পতাকা থেকে, অনুশীলন সমিতি, ভগৎ সিংহের নওজওয়ান সভা, অরবিন্দ ঘোষদের স্বদেশি সংগঠন-সহ বহু দলেরই পতাকা, সবই রয়েছে। সংগ্রহ করেছিলেন পরাধীন ভারতের নানা স্মরণিকা, বইপত্রও। ২০১৯-এ প্রয়াত হন কালীশঙ্কর।

Advertisement

ঠাকুরদার কথা নিয়েই স্মৃতির ঝাঁপি মেলে ধরেন বর্তমানে বিএইচইউ-তে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়তে চলা দেবাঞ্জন। বলেন, “প্রতি বার দেখতাম, স্বাধীনতা দিবসের দিন কয়েক আগে থেকে যাবতীয় সংগ্রহ ও পতাকার বিবর্তন আজকের প্রজন্মকে জানানোর জন্য আলমারি থেকে বার করতেন ঠাকুরদা। বলতেন গল্প।”

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীশঙ্করের মৃত্যুর পরে, তাঁর সংগ্রহে থাকা পরাধীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্মরণিকা ও বইপত্র কলকাতার সীতারামদাস বৈদিক মহাবিদ্যালয়ের সংগ্রহশালায় দেওয়া হয়েছে। তবে পতাকাগুলি নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন দেবাঞ্জন। যদিও, ঠাকুরদার মতো স্কুলে-স্কুলে যান না দেবাঞ্জন। তবে, বাড়িতে কেউ পতাকা দেখতে এলে, ঠাকুরদার শিক্ষাই উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। কেন এমনটা করা? দেবাঞ্জন বলেন, “উদ্দেশ্য একটাই। জাতীয় পতাকা একটি জাতির মেরুদণ্ড। ফলে, সেটির বিবর্তনের ইতিহাস প্রত্যেকের জানা উচিত।” নাতির সূত্রেই যেন প্রয়াত ‘পতাকা দাদু’-কে মনে পড়ে অনেকেরই। আসানসোলের রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র অরিত্র সেন বলে, “দাদুর কাছ থেকেই জেনেছি, এখনও পর্যন্ত পরাধীন ভারতে কতগুলি প্রতীকী জাতীয় পতাকা হয়েছে।” পড়শি অয়ন আচার্যের স্মৃতিতে রয়েছে, স্বাধীনতা দিবস এলেই কালীশঙ্করের পতাকার বান্ডিল হাতে বেরিয়ে পড়ার দৃশ্য।

পতাকা নিয়ে এই গল্প বলার পরম্পরাটি চলছে এ বারেও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement