বৃষ্টির জল এখনও জমে বর্ধমানের সদর ২ ব্লকের তাঁতখণ্ডে। শনিবার। ছবি: জয়ন্ত বিশ্বাস।
সারের কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছিল। এ বার রাতারাতি আলুবীজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে পূর্ব বর্ধমান জেলায়। অভিযোগ, নিম্নচাপের অতিবৃষ্টির আগে যে আলুবীজ প্রতি প্যাকেট (৫০ কেজি) ২,০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, এখন তার দাম এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে খাবার আলুকেও ‘বীজ’ বলে বিক্রির প্রবণতা দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার এ রাজ্যের আলুবীজকে পঞ্জাব বা হরিয়ানার বীজ বলে চালানোর জন্যও অসাধু ব্যবসায়ীরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন বলে দাবি করেছে আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতি। কৃষকদের প্রতি তাঁদের অনুরোধ, ‘নকল’ বীজ থেকে তাঁরা যেন সাবধানে থাকেন।
রাজ্যের কৃষি উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার বলেন, “আমরা আলু চাষের আশা ছাড়ছি না। সে জন্য এখনই বিকল্প চাষের কথাও বলছি না। পঞ্জাব থেকে প্রচুর পরিমাণে আলু বীজ ব্যবসায়ীরা আনছেন বলে খবর পেয়েছি।’’
আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, পূর্ব বর্ধমান জেলায় পঞ্জাব আলু বীজের প্রয়োজন হয় পাঁচ লাখ প্যাকেট, আর বাংলার আলুর প্রয়োজন হয় আট লাখ প্যাকেট। বীজ হিসেবে বাংলার আলুর একটা বড় অংশ হিমঘরেই মজুত করে রাখেন চাষিরা। এ বছর সেই আলু বার করে বীজ হিসেবে পোঁতা হয়েছিল। ওই সমিতির কর্তাদের দাবি, নিম্নচাপের আগে, ৬০ শতাংশ জমিতে আলু বসানোর কাজ হয়েছিল। তার মধ্যে ২০ শতাংশ জমিতে জলদি বা পোখরাজ জাতের আলু লাগানো হয়। নিম্নচাপের জেরে সে আলুর কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তবে জ্যোতি আলুর ক্ষতি বেশি। এই পরিস্থিতিতে ফের চাষিরা জমি ঠিক করে আলু চাষ করার দিকে মন দিয়েছেন। তাতেই বীজের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সে কারণে আলু বীজের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
পশ্চিমবঙ্গ আলু বীজ ব্যবসায়ীর সমিতির রাজ্যের কার্যকরী সভাপতি ও জেলার সম্পাদক দেবেশ ঘোষ বলেন, “নিম্নচাপের আগে ও পরে আলুবীজের দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। অনেক বেশি দাম দিয়ে আমাদের আলু বীজ কিনতে হচ্ছে। দু’হাজার টাকার আলু বীজ এখন ন্যূনতম চার হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই সুযোগে উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানের আলু বীজ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ‘পঞ্জাবের আলু বীজ’ বলে চালানোর চেষ্টা করছে কেউ কেউ। তাঁরা গাড়ি নিয়ে এক প্রকার ফেরি করছেন। চাষিদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
নকল আলু বীজ রাখার অভিযোগে শুক্রবার বিকেলে একটি ট্রাক বাঁকুড়া মোড়ে আটকে দেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। আলু বীজ ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তাদের দাবি, অন্য একটি রাজ্যের খাবার আলু পঞ্জাবের একটি সংস্থার প্যাকেটে ভরে ‘বীজ আলু’ বলে বিক্রি করার চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে, ট্রাকটি হুগলির আরামবাগের দিকে রওনা দেয়। আরামবাগের আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য বাবলু শীলের দাবি, “কালো তালিকাভুক্ত সংস্থার বীজ আলু বিক্রি করার চেষ্টা হচ্ছিল। আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তেই ট্রাকটি পালানোর চেষ্টা করেছিল।’’ কৃষি দফতর ওই আলু পরীক্ষা করে জানিয়েছে, ‘সার্টিফায়েড’ বীজ নয়।
দাম বাড়ার কারণ কী?
কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, নতুন করে আলু চাষে মন দেওয়ার জন্যে বীজে টান পড়ছে। চাষির ঘরে আলু বীজে জোগান নেই। সে কারণে পঞ্জাবের বীজের দিকে ঝোঁক পড়েছে চাষিদের। মেমারির বাসিন্দা আলু বীজ ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য গোড়া দাসের দাবি, “গত বছরের বীজ চাষির ঘরে নেই। ফলে, জ্যোতি আলু চাষে বীজের হাহাকার শুরু হয়েছে। পঞ্জাবের বীজেরও জোগান কম। সে জন্যে বেশি দামেই পঞ্জাব থেকে বীজ কিনতে হচ্ছে।’’ মেমারির এক বীজ ব্যবসায়ী সহিদুল শেখের দাবি, “পঞ্জাব বীজের জোগান কম থাকায় স্থানীয় আলুকেই বীজ বলে বিক্রির প্রবণতা দেখা দিয়েছে।’’
চাষিদের দাবি, হিমঘরের জ্যোতি আলু দিয়ে চাষ করতে এক বিঘায় ১০ বস্তা বীজ লাগে। সেখানে পঞ্জাবের আলু লাগে চার বস্তা। খরচ এক হওয়ার জন্যে পঞ্জাবের ‘সার্টিফায়েড’ বীজ লাগানোর দিকে তাঁরা ঝুঁকছেন। আর এখানেই ‘নকল বীজ’-এর ফাঁদ পাতা রয়েছে বলে দাবি করছেন বীজ ব্যবসায়ীরা।
জেলার উপ-কৃষি অধিকর্তা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নকলকে আসল বলে চালানোর অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অভিযোগ বাড়লে, অভিযানও চালানো হয়।’’