‘মাসিমা’ ডেকে গয়না নিয়ে উধাও

শান্তিদেবীর অভিযোগ, মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য সাড়ে ৭টা নাগাদ অম্বিকা কালনা স্টেশনে যান তিনি। টিকিট কেটে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন। তখনই তাঁর কাছে আসেন এক অপরিচিত যুবক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কালনা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৫৪
Share:

ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছেন শান্তিদেবী। নিজস্ব চিত্র

নম্র ভাবে ‘মা’, ‘মাসিমা’, ‘পিসিমা’ সম্বোধন করে আলাপ জমানো। কথার জালে বয়স্কদের আস্থা অর্জন করে নিচ্ছে তারা। গল্পে এতটাই মেতে যাচ্ছেন বয়স্কেরা যে নিজেরাই ভরসা করে টাকা, গয়না তুলে দিচ্ছেন অপরিচিতদের হাতে। আর সেই সুযোগেই ব্যাগ বদলে উধাও হয়ে যাচ্ছে প্রতারক। গত পাঁচ মাসে পূর্ব বর্ধমানের কালনা পুরসভা এলাকায় চারটে এ ধরনের প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার সকালেও একই ভাবে কালনা ২ ব্লকের কল্যাণপুর পঞ্চায়েতের প্রধান পিন্টু খামারুর মা শান্তি খামারুর সোনার গয়না ‘হাতিয়ে’ নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

শান্তিদেবীর অভিযোগ, মেয়ের বাড়ি যাওয়ার জন্য সাড়ে ৭টা নাগাদ অম্বিকা কালনা স্টেশনে যান তিনি। টিকিট কেটে ট্রেনের অপেক্ষা করছিলেন। তখনই তাঁর কাছে আসেন এক অপরিচিত যুবক। সঙ্গে থাকা ব্যাগে টাকা আছে জানিয়ে একটু দেখতে বলেন বৃদ্ধাকে। কিছুক্ষণ পরে ফিরে দূরে দাঁড়ানো আর এক যুবককে দেখিয়ে বলেন, ‘ও অনেকক্ষণ থেকে পিছু নিচ্ছে। মনে হয় দুষ্কৃতী। সাবধানে থাকুন’। আরও কিছুক্ষণ পরে নিরাপদ জায়গায় যাওয়া উচিত বুঝিয়ে বৃদ্ধাকে অন্যত্র নিয়ে যান ওই যুবক।

শান্তিদেবীর দাবি, ট্রেনের দেরি আছে দেখে তিনিও স্টেশনের কাছেই বৈদ্যপুর মোড় লাগোয়া একটি শপিংমলের সামনে যান। তাঁর অভিযোগ, এর পরে একটি ব্যাগ দিয়ে তাতে সোনার গয়না রাখতে বলা হয়। তাঁর সামনে ব্যাগে তালা দিয়ে চাবিসমেত ব্যাগটি বৃদ্ধার কাছেই রেখে ‘ঘুরে আসছি’ বলে চলে যায় ওই যুবক। দীর্ঘক্ষণ পরেও সে ফিরে না আসায় এক পরিচিত মারফৎ ছেলেকে খবর পাঠান তিনি। প্রধানের দাবি, ‘‘ওই ব্যাগের তালা ভেঙে দেখি, একটি প্যান্ট, জামা আর চটের বস্তা রয়েছে। বুঝতে পারি, ব্যাগ বদলে ফেলা হয়েছে।’’

Advertisement

সঙ্গে সঙ্গেই কালনা জিআরপির কাছে অভিযোগ করেন তিনি। বৈদ্যপুর মোড় এলাকায় কালনা পুরসভার বেশ কিছু ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা রয়েছে। সেগুলির ফুটেজ জোগাড় করে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, শান্তিদেবীর সঙ্গে প্ল্যাটফর্ম থেকে গল্প করতে করতে আসছে সাদা জামা এবং কালো প্যান্ট পরা এক যুবক। তার গলায় জড়ানো রয়েছে মাফলার। কাঁধে রয়েছে ব্যাগ। এমনকি, শান্তিদেবীকে হাত ধরে রাস্তা পার করাতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। পুলিশের দাবি, আস্থা অর্জনের ভানটাই এ ধরনের দুষ্কৃতীদের কৌশল। সে জন্য বয়স্কদের নিশানা করে এরা।

কালনার পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগও বলেন, ‘‘যাতে কেউ সন্দেহ না করে তাই এ ভাবে জাল ফেলছে প্রতারকেরা। যাতে লোকে নিজেরাই গয়না ওদের ব্যাগে দেয়।’’ তাঁর দাবি, সম্প্রতি শহরের আমলাপুকুরেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, ওই মহিলা বাড়ির সামনে এসে প্রতারকেদের হাতে গয়না তুলে দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, শহর লাগোয়া কালনা মহকুমা হাসপাতালের কাছে, পেট্রোল পাম্পের সামনে এ ঘটনা ঘটে। যদিও ওই সব ঘটনার ক্ষেত্রে সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘ঘটনার কথা জানি। যথাযথ তদন্ত শুরু করা হয়েছে। বাকি ঘটনারও তদন্ত চলছে।’’

শান্তিদেবী বলেন, ‘‘মাসিমা বলে ডেকে কথা বলছিল। কেউ যাতে গয়না না দেখতে পায় তাই গলায় মাফলার জড়িয়ে নিতেও বলে। বিশ্বাস করে এ ভাবে ঠকতে হবে বুঝিনি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement