কালনার পূর্বসাতগাছিয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের ক্রিকেটার ক্লাইভ লয়েড। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল।
চল্লিশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও ১৯৮৩-র ২৫ জুন লর্ডসের মাঠে পরাজয়ের স্মৃতি তাড়া করে তাঁকে। সে দিন বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনালে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পর্যুদস্ত হয়েছিল কপিল দেবের অনভিজ্ঞ-আনকোরা ভারতের কাছে। সে কথা উঠতেই শুক্রবার বর্ধমানে একটি স্কুলের আমন্ত্রণে আসা লয়েড বলেই ফেললেন, ‘‘তিরাশির বিশ্বকাপের স্মৃতি আজও আমাকে কাঁদায়। সে বার ভারত দল হিসাবে দারুণ ছিল। বিশ্বকাপ জেতার পরেই ভারত ক্রিকেটে দ্রুত এগিয়ে যায়।’’
কালনা ২ ব্লকের সাতগাছিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠান উপলক্ষে আয়োজিত ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনাল দেখতে এসেছিলেন ৭৫ বছরের লয়েড। স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র দীপনারায়ণ সরকার নিজের আঁকা ছবি তুলে দেন তাঁর হাতে। স্কুলে বিবেকানন্দের মূর্তিতে মালা দেন তিনি। স্কুলের পরিবেশের প্রশংসা করে বলেন, ‘‘যে কোনও মানুষের জীবনের সেরা সময় কাটে স্কুলে।‘‘ পড়ুয়াদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘শর্টকাটে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় না। চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে পরিশ্রম করে যেতে হবে।’’
স্কুলে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন লয়েড। সুনীল গাওস্কর না ব্র্যাডম্যান, কে সেরা? লয়েডের উত্তর, ‘‘তুলনা করা পছন্দ করি না। ব্র্যাডম্যান যেমন তাঁর সময়ে প্রচুর রান করেছেন। তেমনই ভারতের মহান ক্রিকেটার, আমার বন্ধু সুনীল সব দেশে রান করেছেন।’’ নানা প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মুখে ঘুরেফিরে এসেছে কপিল দেব, সচিন তেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারার নাম। আবার তাঁর গলায় বিশেষ প্রশংসা শোনা যায় ক্রিস গেইল, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ারদের নামও। টেস্ট ম্যাচ আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন লয়েড। তাঁর কথায়, ‘‘টি-২০ হল প্রদর্শনী। আর টেস্ট ক্রিকেট হল পরীক্ষা। টেস্ট খেলতে গেলে প্রয়োজন হয় প্রচুর ধৈর্যের।’’
স্কুলের অনুষ্ঠান শেষ করে সেখানেই মধ্যাহ্নভোজ সারেন লয়েড। খাবারের তালিকায় ছিল রাজভোগ, মাখা সন্দেশ, দু’রকম পাস্তা, বিভিন্ন ফল এবং মাছের পদ। খাওয়াদাওয়া সেরে সুসজ্জিত হুড খোলা গাড়িতে তিনি পৌঁছন মাঠে। তাঁর গাড়ির সামনে ছিল ব্যান্ডের দল। রণ পা পরে হাঁটেন অনেকে। রাস্তার দু’ধারে হাজির ছিলেন বহু মানুষ। ব্যাট, বল, খাতায় তাঁর অটোগ্রাফ নেওয়ার জন্য মাঠে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তাঁর সঙ্গে নিজস্বী তোলার মরিয়া চেষ্টা করেন বহু মানুষ। মঞ্চে বলে খেলা দেখেন লয়েড। ম্যাচ শেষে খেলোয়াড়দের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
লয়েডকে দেখতে উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়া থেকে এসেছিলেন সত্তর ছুঁইছুঁই অঞ্জন গোস্বামী। তিনি বলেন, ‘‘রেডিয়োতে ওঁর খেলার ধারাভাষ্য শুনেছিলাম। মাঠে গিয়ে ওঁর খেলা দেখার সুযোগ হয়নি। আজ ওঁকে দেখলাম। এ এক অপূর্ব অনুভূতি।’’ চন্দননগরের যাটোর্ধ্ব প্রতাপ সিংহের কথায়, ‘‘দাপুটে ব্যাটসম্যান ছিলেন। অধিনায়ক হিসাবেও সফল। বয়সের ভারে শরীর কিছুটা ঝুঁকে গেলেও ব্যক্তিত্ব আগের মতোই রয়ে গিয়েছে।’’ ধ্রুব মণ্ডল, সুনীল ঘোষের মতো অনেক ক্রিকেটপ্রেমী বলেন, ‘‘ইউটিউবে ওঁর খেলা দেখি। এখানে এসে ওঁকে দেখার সুযোগ পেয়েই অটোগ্রাফ নিলাম।’’
লয়েডকে স্কুলে আনার নেপথ্যে ছিলেন সাতগাছিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তনী তথা স্কুলের প্ল্যাটিনাম জুবিলি কমিটির চিফ পেট্রন সুরজিৎ বক্সী। প্ল্যাটিনাম জুবিলি উপলক্ষে বছরভর স্কুলে নানা অনুষ্ঠান হবে বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীহাররঞ্জন সাহা বলেন, ‘‘লয়েড এক জন লড়াকু ক্রিকেটার ছিলেন। তাঁর লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা পড়ুয়াদের অনুপ্রেরণা জোগাবে। তাঁকে স্কুলের অনুষ্ঠানে পেয়ে
আমরা গর্বিত।’’